ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুলকপিতে পোকার আক্রমণ, হতাশায় কৃষক

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২২, ১৪:৪১

শেরপুরে এবার আগাম শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ফুলকপি চাষিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডায়মন্ডব্যাক মথ রোগ। স্থানীয়ভাবে ‘সেংগা’ জাতীয় পোকার আক্রমণে পচে যাচ্ছে ফুলকপি, মরে যাচ্ছে গাছ। এতে আবাদের খরচ তোলা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।

জানা যায়, শেরপুর জেলায় এবার শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা ভালো লাভের আশায় বুক বেঁধে নানা জাতের আগাম সবজি রোপণ করেছেন। এর মধ্যে ফুলকপি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর জমিতে। জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এবার সব ধরনের আগাম সবজির বাম্পার ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। তবে ফুলকপির ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ। এতে ফুলকপির গাছের পাতা পচে মরে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ফুলকপিও পচে যাচ্ছে। ফুলকপি চাষ করা বেশিরভাগ কৃষকের মাঠেই দেখা গেছে একই চিত্র। বাজার থেকে কীটনাশক কিনে ক্ষেতে স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে ফুলকপি চাষের খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসের কোনো পরামর্শও তারা পাচ্ছেন না।

সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের কৃষক শমসের আলী জানান, এবার তিনি ১৬ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। বর্তমানে ফুলকপি বড় হওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি তার গাছগুলো পচে মরে যাচ্ছে। ফুলকপিতেও পোকা ধরেছে। দুই/তিনবার করে কীটনাশক দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

কৃষাণী ময়না বেগম বলেন, আমি এবার আগাম বিক্রির জন্য ফুলকপির চারা লাগিয়েছিলাম। সেংগার মতন পোকার আক্রমণে চারা ও ফুলকপি পঁচে যাইতেছে। গাছ মরে যাইতেছে। এই পঁচা রোগ কীটনাশক দিলেও ভালো হইতেছে না। দোকান থেকে কীটনাশক কিনে এনে দিছি কয়েকবার। এরপরও পোকা ছাড়তেছে না। এত টাকা খরচ কইরা টাকা তুলতে না পারলে তো আমাদের মরণ।

কৃষক হারুন মিয়া বলেন, কপির চারা লাগাইছি লাভের জন্য। এখন দেখি সমানে চারা পইচা যাইতেছে। সেংগা ছাড়ে না ক্ষেত থেকে। এত ছেংগা হইছে যে চারা তুইলা ফেলে দিয়ে নতুন চারা লাগাইলেও কাম হইতাছে না। এইডা নিয়াই খুব চিন্তা করতাছি। ৪০/৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ করছি। এমন হইলে তো টাকাই উঠব না। বাজার থেকে বিষ আইনা দেই, তাতেও কোন কাম হয় না। কৃষি অফিসের কোন লোকও খবর নেয় না। এখন আমরা কি করমু? কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আগাম লাগাইছি। আগাম বেচবার পাইলে এল্লা লাভ বেশি হয়। কিন্তু আমার তো এই ছেংগায় সব শেষ কইরা দিতাছে। বাজার থাইক্কা বিষ কিন্না দিতাছি তাও কাম হইতাছে না। এহন কি করমু।

স্থানীয় কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, আমি এবার ২০ শতাংশ জমিতে লাগাইছি। আরও লাগামু চিন্তা করছি। কিন্তু চারা কিছুটা বড় হইয়াই পোকা ধরে। বিষেও কাজ হয় না। বিষ একবার যদি ভালা দেয়, তিনবারই খারাপ দেয়। আমরা তো ভালোমন্দ বুঝি না। ওষুধ কোম্পানীর লোকেরা যে ওষুধ দেয় সেটাই ক্ষেতে দেই। কোন কৃষি অফিসার টফিসার তো আমাগরে খোঁজ নিবার আহে না। আমি এর আগেও একবার মাইর খাইছি, এখন আবার ক্ষেত লাগাইতাছি।

এ ব্যাপারে জেলা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, জেলায় এবার ১৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ করা হয়েছে। কৃষকরা ফুলকপিতে যে রোগের কথা বলছেন সেটির নাম ডায়মন্ডব্যাক মথ। নির্দিষ্ট জাতের বালাইনাশক ব্যবহারে এই রোগে ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। আমরা নিজেরা থেকে মাঠ পর্যায়ে দ্রুত পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আর মাঠ পর্যায়ে যে কৃষি কর্মকর্তারা রয়েছেন তারাও এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছেন।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ