বাংলাদেশে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল উদ্যোক্তার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। চাকরির পিছনে না ঘুরে হচ্ছেন উদ্যোক্তা। অনেকেই আবার উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন। ঘরে বসেই দেশ-বিদেশি সব ক্রেতাদের চাহিদার কাজ সম্পন্ন করছেন তারা। এই কাজের বিনিময়ে উপার্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। এ রকম ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের মোস্তাকিম জনি। মোস্তাকিম জনির বাড়ি গুরুদাসপুরের সীমান্ত নাছিয়ারকান্দী গ্রামে।
শুধু মোস্তাকিম জনি একা নন। গুরুদাসপুরে তার মতো অনেক যুবকই এভাবেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত ডলার আয় করছেন। মোস্তাকিম জনি প্রথমে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে হয়েছেন একজন উদ্যোক্তা এবং পরবর্তীতে দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের নিয়ে উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তার মূলমন্ত্র হলো- ‘উদ্যোক্তা হও, উন্নত কর’। তিনি ‘ডিজিটাল এয়ার’ এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা। মোস্তাকিম জনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার, ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট এবং উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকের কাছেই পরিচিত মুখ।
ডিজিটাল এয়ারের মাধ্যমে টেক রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেওয়া এবং দেশ-বিদেশের অনেক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করে আসছেন তিনি। ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরিতে ফেমাস কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ও নানুপুর ওবাইদিয়া পোস্ট ই-সেন্টার কম্পিউটার ল্যাবে প্রশিক্ষক হিসেবে প্রায় শতাধিক তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বেকার সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সুযোগ হয়েছে তাদের কর্মসংস্থানের। অনেকেই দেশ-বিদেশে কাজ করে আয় করছেন প্রতিনিয়ত। মোস্তাকিম জনি আইটি সেক্টরের বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় সমাধান করতে পছন্দ করেন। জনি খুব অল্প বয়সে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত বিভিন্ন কলাকৌশল শিখে কাজ করেছেন জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, পাবলিক ফিগার, সেলিব্রিটি, লেখক, উদ্যোক্তা, ইনফ্লুয়েন্সার, মিউজিশিয়ান, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে।
মোস্তাকিম জনি আরও জানান, দেশকে এগিয়ে নিতে আইটি সেক্টর অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে, এখন যে কেউ চাইলে নিজের ক্যারিয়ার প্রযুক্তিতে গড়তে পারে। হতাশায় না থেকে প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক বড় সম্ভবনা আছে। আর তরুণদের এটি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করেন ডিজিটাল উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনি।
মোস্তাকিম জনির বাবা লোকমান হোসেন জানান, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তবে মেঝ ছেলে মোস্তাকিম জনি দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ফজিলত (অনার্স শেষ বর্ষে) অধ্যয়ন করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সের মাধ্যমে আয় শুরু করেন। ওই আয় থেকেই নিজের লেখা-পড়ার খরচসহ সংসারের কাজে সহায়তা করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক সহকারি প্রোগ্রামার মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, তাদের অফিসের হিসাবমতে, গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষিত যুবক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যপক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। চাকরির পিছনে ছোটাছুটি না করে শিক্ষিত যুবকরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরে ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি পাবে অধিক হারে। তবে সরকারিভাবেও এসব ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুনদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের আসার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ