ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাগেরহাট মহিলা অধিদপ্তরে নিয়মবহির্ভূত প্রশিক্ষক নিয়োগসহ নানা অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ০৭ নভেম্বর ২০২২, ২০:৪১

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ের অফিস সহকারী পতিত পবন রায়ের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাত, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সহকর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব অন্যায়ের বিচার ও প্রতিকারের দাবিতে ওই কার্যালয়ের একাধিক কর্মী বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পতিত পবন রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান ও এমব্রয়ডারি ট্রেডের প্রশিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ করেছেন সাবেক প্রশিক্ষক ডালিয়া পারভীন। গালিগালাজ ও মারধরের ভয় দেখিয়ে পাওনা টাকা না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রশিক্ষণ সেন্টারের ক্লিনার আছিয়া আক্তার। দুর্নীতি ও সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ব্যাগ মেকিং ট্রেডের প্রশিক্ষক সৈয়দা লায়লা আক্তার।

অভিযোগকারী ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসা প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমএলএস পদে যোগদান করে পদন্বতি পেয়ে অফিস সহকারী হওয়া পতিত পবন রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে বাগেরহাট কার্যালয়ে চাকুরী করছেন । কর্মকর্তাগণের বারবার বদলীর সুযোগ নিয়ে পতিত পবন রায় অঘোষিত কর্মকর্তা বনে যান । কার্যালয়ের প্রশিক্ষক, অফিস সহায়ক ও প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে নানারকম অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভাতার টাকা এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের টাকা আত্মসাত করতে থাকে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১৪ সালে নিজ স্ত্রী নিতিকা হালদারকে কম্পিউটার ট্রেডের প্রশিক্ষক পদে চাকরি প্রদান করেন। এক ব্যক্তিকে বারবার প্রশিক্ষণ প্রদান করে ওই প্রশিক্ষণার্থীর ভাতার টাকা আত্মসাত করেন পতিত পবন রায়। যেসব প্রশিক্ষণার্থী নিয়মিত ক্লাস না করেন, তাদের নামে টাকা তুলে নিজে রেখে দেয় পতিত পবন রায় । প্রশিক্ষণার্থীদের হয়রানিও করে থাকেন তিনি। পতিত পবন রায়ের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার উপর নানা রকম অত্যাচার করারও অভিযোগ রয়েছে ।

ডালিয়া পারভীন নামের এক সাবেক প্রশিক্ষক বলেন, পতিত পবন রায় অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে কোনো প্রকার সার্কুলার ছাড়া আকলিমা বেগম নামের এক ব্যক্তিকে দর্জি বিজ্ঞান ট্রেডের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন । যিনি ইতোপূর্বে জেলা কার্যালয়ে পাপস ট্রেডে চাকরি করতেন। যা বর্তমান ট্রেডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । এর মাধ্যমে পতিত পবন রায় আমার অধিকার খর্ব করেছে। আমার চাকরি পাওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে।

প্রশিক্ষক সৈয়দা লায়লা আক্তার বলেন, প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার টাকা আত্মসাতের জন্য হাজিরা খাতায় ভুয়া স্বাক্ষর করতে বলা হয়। আমি স্বাক্ষর না করায় পতিত পবন রায় আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। আমার মুঠোফোন টেনে ফেলে দেয় । আমাকে চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দিয়েছেন। এসব অন্যায়ের বিচার পেতে আমি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ।

ট্রেনিং সেন্টারের ক্লিনার আছিয়া আক্তার বলেন, পতিত পবন রায় আমাকে ব্লক বাটিক ট্রেডে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে ভর্তি করেন। প্রশিক্ষণ শেষে আমার নামে ভাতা হিসেবে ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু আমাকে দেওয়া হয় মাত্র ৪ হাজার টাকা । এছাড়া তার বৌ-বাচ্চারা বাসায় না থাকলে, বাসায় যেতে বলে। বাসায় না যাওয়া এবং অবশিষ্ট টাকা চাওয়ায় আামাকে গালিগালাজ করে অফিস থেকে বের করে দেয় পবন । কারও কাছে নালিশ করলে আরও বেশি খারাপ হবে বলেও হুমকি দেয় এই অফিস সহকারী ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এক প্রশিক্ষক বলেন, পতিত পবন রায় একজন দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারী। প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা ও সরকারি টাকা আত্মসাতের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত এই অফিস সহকারী এমন দাবি করেন এই প্রশিক্ষক।

গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন না করার অভিযোগও রয়েছে ওই দপ্তরের বিরুদ্ধে । তবে দিবসটি পালন না করে বরাদ্ধের পাচঁ হাজার উত্তোলন করে আত্ম সাত করা হয়েছে ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাজমুন নাহার বলেন, বড় করে পালন করা হয়নি। তবে জাতীয় শোক দিবসে একটি ফুলের মালা দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সরকারি অর্থ আত্মসাত, অনিয়ম ও দুর্নির্তিকথা জানতে চাইলে তিনি বলেন মঙ্গলবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আসবে আমি এনিয়ে খুব ব্যাস্ত আছি এখন এবিষয়ে কোন কথা বলতে পারবো না ।বুধবার এবিষয়ে কথা বলার সময় চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন কবে এবিষয়ে কথা বলতে পারব এই মুহুর্তে বলতে পারছিনা বলে তিনি টেবিলে রাখা ফাইল ও কাগজ পত্র ঘোটা ঘুটি শুরু করেন ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রোব ও সোমবার অফিসে গিয়ে পতিত পবন রায়কে পাওয়া যায়নি । ০১৭ ১৯ ৮৩ ৪২ ৮০ বারবার ফোন করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নয়াশতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ