ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফরিদপুর-২ আসনের এমপি সাজেদাপুত্র শাহদাব

প্রকাশনার সময়: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ২১:১৭

ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) উপনির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু ৬৮ হাজার ৮শ ১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া বটগাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮শ ৭৮ ভোট।

ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো: হাবিবুর রহমান জানান, ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু ৬৮ হাজার ৮শ ১২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া বটগাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮শ ৭৮ ভোট।

শনিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তবে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল।

ফরিদপুর-২ আসনটি নাগরকান্দা, সালথা উপজেলা ও সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এতে ভোটার ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫শ ৮৫ জন।

এর মধ্যে নগরকান্দা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৫। সালথা উপজেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৬০ ও সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ২৮ হাজার ১৩৭ জন ভোটার। নির্বাচনে ১২৩ ভোট কেন্দ্রে ৮০৬টি

ভোট কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম এ ভোট গ্রহণ করা হয়।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কেন্দ্রগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়।

এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন।

ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ছিল না বটগাছের এজেন্ট ফরিদপুর-২ আসনের উপ-নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কমের সাথে সাথে সব কেন্দ্রেই বাংলাদেশ আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীর এজেন্ট থাকলেও অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই পাওয়া যায়নি একমাত্র প্রতিদ্বন্দী বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রাথীর এজেন্ট।

শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ফরিদপুর-২ আসনের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার অন্তত ১২টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে ফরিদপুরের নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকে এগারোটা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।

নগরকান্দার তালমা আমিনুদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৮ টা ৪০ পর্যন্ত মাত্র ৩৪ জন পুরুষ ভোটার ও পাশের নারী কেন্দ্রে মাত্র তিনজন ভোট দেন। পাশেই সদরপুরের কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে ২৭০৬ ভোটের মধ্যে হাজির হন মাত্র ৩২ জন।

বিল গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে সকাল দশটায় ৩২৩৭ ভোটারের মধ্যে ৩৩৩ জন ভোট দিয়েছেন। নগরকান্দার ফুলসুতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১ টার দিকে ২৭৪৮ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ২৪১ জন। বাউতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১ টার মধ্যে আড়াইশো ভোটার ভোট দিয়েছেন।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতির হার বাড়তে থাকে, কিছুটা পাল্টে যায় ভোটকেন্দ্রের চিত্র। দুপুর একটার দিকে লক্ষণ দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৪৫৩ ভোটের মধ্যে ৩৮৬ ভোট পড়ে।

বিলম্বে ভোট দিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইভিএমে সহজেই ভোট দেয়া যাচ্ছে এ খবরটি তারা পেয়েছেন যারা ভোট দিয়ে গেছেন, তাদের কাছে। ভোট দেয়ার ভালো পরিবেশ আছে এটা নিকটজনদের কাছে নিশ্চিত হবার পরই ভোটারদের সংখ্যা কিছু বাড়ে।

ফুলসুতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একজন ভোটার মারুফ খান রণি। কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি এত কম কেন তা জানতে চাইলে বলেন, মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না, ভোট দেয়া যাবে। কেউ ভাবছে যেহেতু সরকার দলের প্রার্থী এমনিতেই জিতে যাবে, তাই আমরা আর কষ্ট করে কেন্দ্রে যাব কেন? আবার প্রার্থী বা তাদের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট না চাওয়ায় অনেকে রাগে বা কষ্টে আসছেনা কেন্দ্রে।

আরেক ভোটার হাফিজ উদ্দীন বললেন, ভোটের চেয়ে ক্ষেতের ফসলের পরিচর্যার দিকে মানুষের আগ্রহ বেশী। দুই প্রার্থী সমান সমান না হলেও কাছাকাছি হয়, তাও মানায়। একজন বিশাল প্রভাবশালী, আরেকজন তার তুলনায় কিছুই না, সব কেন্দ্রে সে এজেন্টও দিতে পারে নাই, তাই ভোটাদেরও আগ্রহ কম এই ভোটে।

দুপুর দেড়টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার ১৪ নং বাউতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের লাইনে দাঁড়ানোর কোনো সারি নেই। সেখানে ২৩১২ জন ভোটার থাকলেও কাস্টিং হয়েছে মাত্র ৩৯৬ ভোট। তবে, সেখানে নৌকার এজেন্ট থাকলেও বটগাছ প্রতীকের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি।

সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার শামসুল হক বলেন, এখানকার সবগুলো বুথে নৌকার পুলিং এজেন্ট থাকলেও বটগাছ প্রতীকের প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেননি প্রার্থী।

কেন এজেন্ট দেননি এব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

একই উপজেলার ১ নং নগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়েও নৌকার এজেন্ট পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রাথীর কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ওই কেন্দ্রে ২০০৬ জন ভোটার থাকলেও ভোট কাস্টিং হয়েছে মাত্র ৪২৮ ভোট।

তার কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট থাকলেও বটগাছ প্রতীকের কোনো এজেন্ট নেই কেন, এ প্রশ্নের জবাবে সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, এটা বলতে পারছিনা; কেন এজেন্ট দেননি বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী; সেটা প্রার্থী নিজেই ভালো বলতে পারবেন।

তবে তিনি বলেন, বটগাছ প্রতীকের প্রার্থীর পর্যবেক্ষক দল ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে গেছেন।

এদিকে সালথা উপজেলার সালথা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সালথা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র গিয়েও বটগাছ প্রতীকের কোনো পুলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া মিয়া বলেন, আমি নির্বাচন পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তবে, কিছু কেন্দ্র বাদে প্রায় সব কেন্দ্রে আমার এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। তবে, বেশ কিছু কেন্দ্র থেকে তার পুলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন এ প্রার্থী।

নির্বাচনে দুই জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন, সদ্য প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহাদাব আকবর চৌধুরী লাবু ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে কাজ করে।

খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ফরিদপুর-২ আসনের রিটার্নিং অফিসার মো. হুমায়ূন কবির বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ, র ্যাব, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গত ১১ সেপ্টেম্বর সংসদীয় এই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ