ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নয়া শতাব্দীর সংবাদে হুইলচেয়ার পেল জান্নাত

প্রকাশনার সময়: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৪:০৭ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ২২:০৮

‘আমার মেয়ে কথা বলতে পারেনা। আমারে আম্মু বলে ডাকতে পারেনা। সবাই হাঁটতে পারে,আমার মেয়ে হাঁটতে পারেনা। আমার খুব কষ্ট হয়। আপনারা আমার মেয়েরে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড কইরা দেইন, একটা হুইল চেয়ার দেইন। একটা হুইল চেয়ার অইলে তারে লইয়া বিভিন্ন জায়গায় যাইতাম। আমার একটু সুখ লাগতো। মেয়ের এই কষ্ট আমার সহ্য হয়না। আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য একটু সাহায্য করেন।’ প্রতিবন্ধী শিশু জান্নাতের মা নাজমিনার এই আকুতি নিয়ে দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর হুইল চেয়ার পেয়েছে প্রতিবন্ধী শিশু জান্নাত।

শনিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকার নান্দাইল প্রতিনিধি আমিনুল হক বুলবুল প্রতিবন্ধী জান্নাতের নানার বাড়িতে গিয়ে হুইল চেয়ারটি জান্নাতের মা নাজমিনা আক্তারকে পৌঁছে দেন।

প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে কিংবা কাঁদামাটিতে শুয়ে মানবেতর জীবন কাটছিল শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী শিশু জান্নাতের। গত ৭ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকায় 'প্রতিবন্ধী ভাতা ও হুইল চেয়ারের আকুতি' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর আগে নয়া শতাব্দীর অনলাইনে বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সংবাদটি প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী জান্নাতকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তি প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য আলমগীর কবির দোলন প্রতিবন্ধী শিশুটিকে হুইল চেয়ার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে দোলনের বড় বোন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাহান আইরিন শিশুটির জন্য একটি হুইল চেয়ার দেন। হুইল চেয়ারটি দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকার নান্দাইল প্রতিনিধি আমিনুল হক বুলবুলের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় খারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসনাত ভুঁইয়া মিন্টু, স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা, শিশু জান্নাতের নানী জোসনা আক্তার।

জানা যায়, প্রতিবন্ধী শিশু জান্নাত (৬) ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের কয়ারপুর গ্রামের হতদরিদ্র রাজিব ও নাজমিনা দম্পতির মেয়ে। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী, কথা বলতে পারেনা। হাত-পায়ে কোনো শক্তি না থাকায় চলাফেরায় অক্ষম। নিজে নিজে বসতে পারেনা, দাঁড়াতে পারেনা, পারেনা হাঁটতে। তবুও মুখভরা হাসি নিয়ে বাড়ির উঠোনের এক কোনে সারাদিন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে, মাটিতে শুয়ে দিন কাটে তার। দিনমজুর বাবা রাজিবের পক্ষে মেয়ের জন্য কিনে দেয়া সম্ভব হয়নি একটি হুইল চেয়ার। দিনমজুরির অল্প উপার্জনে সংসার চলে কোনো রকমে।

প্রতিবন্ধী শিশু জান্নাতের মা নাজমিনা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী।কথা বলতে পারেনা, হাঁটতে পারেনা। মেয়েরে নিয়া খুব কষ্টে আছি। সাংবাদিক স্যার আমাদের বাড়িতে আইসা আমার মেয়ে জান্নাতকে দেখছে। এহন একটা হুইল চেয়ার দিছে অহন মেয়েরে লইয়া চলাফেরা করতে পারাম। আমি তাদের দোয়া করি।

শিশু জান্নাতের নানী জোসনা আক্তার বলেন, নাতিনরে লইয়া খুব কষ্ট করতাছি। সাংবাদিক আইসা একটা চেয়ার দিছে। অহন নাতিনরে লইয়া ঘুরতারাম।

আওয়ামী লীগ নেতা আলমগির কবীর দোলন বলেন, নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম প্রতিবন্ধী জান্নাতের একটি হুইল চেয়ার প্রয়োজন। আমার বড় বোন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাহান আইরিন হুইল চেয়ার দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। হুইল চেয়ারটি পেয়ে জান্নাত একটু আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারবে। আমি তার জন্য দোয়া করি।

স্থানীয় খারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসনাত ভুঁইয়া মিন্টু বলেন, প্রতিবন্ধী জান্নাত বসতে পারেনা, দাঁড়াতে পারেনা, হাঁটতে পারেনা, কথাও বলতে পারেনা। তার বাবা-মা খুব অসহায়। সাংবাদিক আমিনুল হক বুলবুলের মাধ্যমে একজন মানবিক মানুষ হুইল চেয়ার প্রদান করেছেন। আমি সেই হুইল চেয়ার পৌঁছে দিতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ