হাসপাতাল আছে, রোগীর দীর্ঘ অপেক্ষা আছে কিন্তু ডাক্তারদের সঠিক সময়ে উপস্থিতি নেই। ডাক্তারের অপেক্ষায় হাসপাতালে বসে রোগীর অসুখের যন্ত্রণা বাড়ে, কিন্তু সঠিক সময়ে সেবা মিলে না। কারণ ডাক্তাররা চলেন নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো। মানেন না সরকারি আদেশ-নিষেধ। উপস্থিত হন না সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মে।
এমন চিত্রই দেখা গেছে নওগাঁর বদলগাছী হাসপাতালে। কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা হাসপাতালে আসেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নিয়ম থাকলেও চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই তা মানছেন না। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা কিংবা দুই ঘণ্টা পর শুরু করেন কার্যক্রম। এদিকে ভোরেই উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে অপেক্ষা করেন সেবার জন্য।
দুপুরের পরও অনেক চিকিৎসককে আর নিজেদের কামরায় পাওয়া যায় না। এ সময় বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে রোগী দেখে সময় কাটান তারা।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তারের আগমন ঘটলে খুশি লাগে রোগীর। এই বুঝি ডাক্তার দেখানো যাবে। কিন্তু না, ডাক্তার এলেই শুরু হয় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকদের চিকিৎসকদের কামরায় যাতায়াত। ফলে টিকিট হাতে রোগীর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টার।
বুধবার (২ নভেম্বর) সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বহির্বিভাগের দরজা খোলা থাকলেও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কোনো ডাক্তারের দেখা মিলেনি। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় তার স্থলে দায়িত্বপালন করছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সাদ্দাম হোসেন ও ওয়ার্ড বয় হারুনুর রশিদ।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ছানাউল, সোবহান, হাসান, রশিদা, সেতু, দেলেজানসহ অনেকে ক্ষোভ নিয়ে বললেন, এ হাসপাতাল শুধু নামেই। এখানে ঠিক সময়ে ডাক্তারদের যেমন পাওয়া যায় না তেমনি প্যারাসিটামল আর এন্টাসিড ট্যাবলেট ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে টাকা দিয়েই সব ওষুধ কিনতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনেরবেলায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গেলে ডাক্তারকে চেম্বারে পাওয়া যায় না। ডাক্তার তার নির্দিষ্ট রুমের মধ্যে থাকেন। রোগী আসলে ডাকা হয় নয়তো পাশে বসা সহকারী দিয়েই চলে চিকিৎসাসেবা। রাতের বেলা প্রায়ই চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ডিউটির বেশিরভাগ সময় নির্দিষ্ট রুমে থাকেন তারা।
বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফারহানার কার্যালয়ে দুপুর পৌনে ২টায় গিয়ে তাকে না পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সকাল ১০টায় আমি হাসপাতালে ডাক্তারদের দেখেছি।
সময়মতো ডাক্তাররা উপস্থিত হয় না কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনি আগামীকাল অফিসে আসেন, সাক্ষাতে কথা বলব; বলে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে সকাল ৮ টা থেকে অফিস সময়। আর এইসব দেখার দায়িত্ব ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। যদি নির্দিষ্ট সময়ে কেউ অফিসে না আসেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ