সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বর্ষার পানি না নামতেই শুরু হয়েছে পুকুর খনন। কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ব্যহত হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল উৎপাদন। এ দিকে পুকুর খননের কাদামাটি আঞ্চলিক ও মহাসড়কের ওপর দিয়ে বহন করায় সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
গত কয়েক বছর ধরে ফসলি জমিতে পুকুুর কাটার ফলে উপজেলার বোয়ালিয়া, মাধবপুর, শ্রীকৃষ্টপুর, তাড়াশ, মঙ্গলবাড়িয়া, কোহিত, ঘরগ্রাম সহ নিচু এলাকার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। খাল, ব্রিজ ও পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে বর্ষার পানি সময় মতো নামতে না পারায় রবিশস্য চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। বিলম্বিত হচ্ছে ইরি বোরো আবাদও।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাড়াশ উপজেলায় ৮৫০ টি পুকুর খনন করা হয়েছে। যাতে ৬২০ হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ভেকু মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, চলতি বছরে এ উপজেলায় শতাধিক পুকুর খনন করা হবে।
আরও জানা গেছে, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের আবাদি জমি বার্ষিক লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। যেখানে কৃষকেরা ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা লিজ পান, সেখানে পুকুর কাটলে প্রতি বিঘায় বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান। তাই বেশি মুনাফার লোভে কৃষকরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পুকুর খনন করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তালম ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের ও কুন্দাশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ (বিএসসি) প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেকুর ঠিকাদার বলেন, সাংবাদিকরা বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিবে। আর আমরা বিভিন্ন দফতর ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করি। তাই পুকুর খননে কোনো সমস্যা হয় নাই, হবেও না।
উল্লেখ্য, গত বছর এই তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার অপরাধে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মো. ওবায়দুল্লাহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। সেই সঙ্গে পুকুর কাটা বন্ধ করে দেন। অথচ কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে এ বছর আবার পুকুর খনন চলছে।
পুকুর খননের বিষয়ে তালম ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ খান জানান, পুকুর না কাটার জন্য স্কুল শিক্ষক আব্দুর রশিদকে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও তিনি আদেশ অমান্য করে পুকুর খনন করছেন। বিষয়টি উপজেলা কমকর্তা স্যারকে লিখিত ভাবে জানানো হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না -সরকারি এ নির্দেশ অমান্য করে তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম জানান, পুকুর খনন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন রাজস্ব বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ