তৃতীয় লিঙ্গ ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠির মৃত্যুর পর মরদেহ সৎকার নিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। বিষয়টি জানার পর শেরপুরে সরকারি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারি হিজড়াদের জন্য পৃথক কবরস্থান নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান। সেইসাথে জেলার তালিকাভুক্ত ৫২ জন হিজড়ার মধ্যে যে কারও মৃত্যু ঘটলে তিনি তার মরদেহ সৎকার এবং দাফনের সকল ব্যয় ব্যক্তিগতভাবে বহনের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও জানান।
রোববার (৩০ অক্টোবর) শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দানকালে পুলিশ সুপার এমন ঘোষণা দেন। সন্ধ্যায় শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া-সুতিরপাড় এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রাম প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেককাটা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান তার বক্তব্যে হিজড়াদের পাশে থেকে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার বিষয় প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, হিজড়াদের মৃত্যুর পর তাদের শেষকৃত্য নিয়ে তারা অনেক সামাজিক প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়। সেই সমস্যা সমাধানে তাদের জন্য কবরস্থানের জায়গা আমি নিজ অর্থায়নে করে দেবো। এজন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সুবিধাজনক একটি স্থান নির্বাচনে তাকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কবরস্থানের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। সেইসাথে তিনি (এসপি) যেখানেই থাকুক না কেনো এই জনগোষ্ঠীর (হিজড়া) কারোর শেষকৃত্যের সময় সকল খরচ নিজ অর্থায়নে সারাজীবন বহন করবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। একইসাথে স্থানীয় হিজড়াদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে স্থায়ী আয়-উপার্জের মাধ্যম তৈরি করতে গৃহপালিত পশু গরু কিনে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যাদের হস্তশিল্পের দক্ষতা রয়েছে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করবেন এবং তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সব রকমের সহায়তায় শেরপুর জেলা পুলিশ তাদের পাশে থাকবে বলে জানান। হিজড়া জনগোষ্ঠী যাতে সমাজের অন্য সকলের মত সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, সামাজিক রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা পায়-জনপ্রতিনিধিদের ও স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেরপুর জো হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, কামারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. সারোয়ার জাহান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বারী চাঁন প্রমুখ।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, হিজড়াদের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। জেলা প্রশাসন আমাদের আবাসন করে দিয়েছে। আমাদের আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসন, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা এসপি মহোদয় এবং তার পত্মীর কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আজ আমাদের সাথে একটি দিন কাটিয়েছেন, আমাদের অনুষ্ঠানের কেক কেটেছেন, আমাদের আনন্দে শরীক হয়েছেন, আমাদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরস্থান নির্মাণ ও সৎকারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুত দিয়েছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা আমাদের নেই। আমরা আশা করছি, এভাবে সকলের ভালোবাসায় একদিন আমরা অব্যশই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবো, সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে একই মর্যাদায় বাঁচতে পারবো।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ