নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার রাজার বাজার এলাকায় অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা একটি সিসা তৈরির কারখানার ক্ষতিকর পদার্থ থেকে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (৩০ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে পূর্বধলার উত্তরখলিশাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম ওই অভিযোগের বিষয়ে দৈনিক নয়া শতাব্দীকে জানান, তিনি নিজেই সম্প্রতি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগটি করেন।
অভিযোগে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে অবৈধ ওই কারখানাটি পরিচালনা করা হচ্ছে পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের জামুদকান্দাপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে শিমুল সাখাওয়াতের (৩২) ঘর থেকে। এ ঘরে ২০-২৫ জন শ্রমিকের মাধ্যমে তিন মাস ধরে প্রায় নিয়মিত ছোট বড় বিভিন্ন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে।
ব্যাটারি পোড়ানোর তীব্র গন্ধে একদিকে, অস্বস্তিতে পড়ছে গণ-বসতিপূর্ণ আশপাশ এলাকার মানুষ। অন্যদিকে, ক্ষতিকর পদার্থ বাতাসে মিশে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশের এ দূষণের ঝুঁকিতে পড়ছে কোমলমতি শিশুসহ বয়স্ক মানুষেরাও। তাছাড়া, ওই কারখানার দূষিত ব্যাপক পরিমাণ তরল বজ্য পদার্থ কারখানাটির পাশের ধলাই নদীতে মিশে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি ও আবাদি জমির ঊর্বরতা আর ফসল।
অভিযোগে আরো জানা গেছে, ওই কারখানাটির ধোঁয়া ও বজ্য পদার্থের বিষাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের চোখ জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টির পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক হারে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট। ফলে পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কারখানার মালিক শিমুল সাখাওয়াত জানান, তিনি নিজে শুধুমাত্র ওই ঘরটিরই মালিক। কারখানার নয়। ওই ঘরটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে মোশারফ হোসেনের (৩৫) কাছে। ওই মোশারফ হোসেন ঘরটিতে কিসের ব্যবসা করছেন তা জানেন না সাখাওয়াত।
তবে ঘরের ভাড়াটিয়া মোশারফ হোসেন বলেন, আমি অন্য কোনো ব্যবসা বাণিজ্যে সুবিধা করতে পারি না। তাই ব্যাটারি পুড়ে সিসা তৈরির ব্যবসাটি করছি। এ ব্যবসা পরিবেশ বিরোধী ও অবৈধ এমন প্রশ্নের জবাবে মোশারফ হোসেন বলেন, অন্য অনেকেই এ ব্যবসা করেন তাই আমিও করছি।
এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. পারভেজ আহম্মেদ জানান, পূর্বধলা ছাড়াও মদন উপজেলাসহ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় রয়েছে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা। রাতের আঁধারে এসব কারখানায় পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। এসব সিসায় নতুন ব্যাটারি তৈরি হয় বলে উচ্চ দামে সিসা বিক্রি করে অনেকটা বেশি লাভ পায় সিসা মালিকরা। তবে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা পরিবেশ আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ আহসান প্রিন্স জানান, সিসা তৈরি কারখানার বিরুদ্ধের অভিযোগটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ