পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিনের মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও কর্মচাঞ্চল্য হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ইলিশের পাইকারি বাজার চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্য রাতে নদীতে ইলিশ শিকারে নামে জেলেরা। ইলিশ, পাঙাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ নিয়ে আসছে আড়তে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টায় বরফ ছাড়া হাজার মণ চকচকে রূপালী ইলিশ বিক্রি হয় মাছঘাটে। একই শত বিক্রি হয় প্রায় দেড়শ মন পাঙাশ মাছ।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বড় স্টেশন মাছঘাটের প্রায় অর্ধশতাধিক আড়তের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ইলিশ ক্রয় ও বিক্রয় কাজে ব্যস্ত দেখা যায়।
সকাল ১০টা থেকে মাছঘাটে পুরোধমে ইলিশ বিক্রি হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে বিক্রি করা ইলিশ বক্স করে প্রস্তুত করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য। মাছঘাটের সামনের খোলা জায়গায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শত শত বক্স করে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ট্রাকে এবং ট্রেনে এসব মাছ চালান করা হবে।
মাছঘাটের ব্যবসায়ী হাজি হজরত আলী বেপারী বলেন, আজকে সকাল থেকেই আমি আড়তে। পদ্মা-মেঘনার আমদানি করা ১ হাজার মণের বেশি ইলিশ বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে বড় বড় পাঙাশ মাছ। অভিযানের পরে আজকে স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি পাঙাশ পেয়েছে জেলেরা। এক জেলে এনেছে ৩০টি পাঙাশ এবং আরেকজন এনেছেন ২১টি। আজকে ১শ থেকে দেড়শ মণ পাঙাশ বিক্রি হয়েছে।
ভাই ভাই মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জমাদার বলেন, আজকে প্রচুর পরিমাণ পাঙাশের আমদানি হয়েছে। ৬শ টাকা থেকে শুরু করে ৬৫০টাকা কেজি দরে পাঙাশ বিক্রি হয়েছে। আর ২ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬শ টাকা করে। তবে বড় সাইজের প্রত্যেক ইলিশের পেটে ডিম আছে। ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা করে। ৪শ ৫শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের সময় নদীতে মাছের বিচরণ অনেকটা নিরাপদ থাকে। যে কারণে সাগর থেকে উঠে মাছ নদীতে প্রবেশ করে। যে কারণে ইলিশের পাশাপাশি বড় বড় রুই, কাতল, আইড়, পোয়া, বোয়াল, রিটাসহ অন্যান্য মাছ জেলেরা পেয়েছে।
মেঘনার পশ্চিম পাড় রাজরাজেশ্বর এলাকার জেলে মোছলেম মাঝি বলেন, তিনি ইলিশের সঙ্গে পাঙাশ পেয়েছেন ৫টি। প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি করেছে ৫৫০ টাকা করে। প্রতিটি পাঙাশের ওজন ৮ থেকে ১০ কেজি। আরেক জেলে ছমিদ আলী ইলিশের সঙ্গে পেয়েছেন পাঙাশ ও আইড় মাছ। তিনি ৩ বড় পাঙাশ বিক্রি করলেন একই আড়তে। আইড় মাছ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য ও বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর সাধারণ সম্পাদক হাজি শবেবরাত বলেন, আজকে সকাল থেকেই লোকাল ইলিশের আমদানি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম আছে। কয়েকদিন গেলে বুঝা যাবে ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার পরিস্থিতি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, এবারের মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আমরা চেষ্টা করেছি, জেলেদেরকে মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখতে। কারণ ইলিশ বড় হলে এবং ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলে এর সুবিধা তারাই ভোগ করবে। বড় বড় সাইজের ইলিশ ও পাঙাশ পাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। কারণ ইলিশ পদ্মা-মেঘনা বিচরণের সুযোগ পেয়েছে।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ