সিত্রাংয়ের প্রভাবে শেরপুরের নকলায় সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় আমন আবাদসহ শীত কালীন শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সারারাত বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জনসাধারণকে।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে উপজেলার অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমির আমন আবাদ পানিতে ডুবে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় পানিতে পড়ে গেছে আরও প্রায় শত হেক্টর জমির ধান গাছ। তাছাড়া শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষেত ৬০ একর এবং বীজ বপণের জন্য তৈরি করা আরও প্রায় ৮০ থেকে ৯০ একর জমিতে পানি জমে জমির জোঁ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। সারারাত ছিলো না বিদ্যুৎ। তাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ, শিক্ষার্থী ও চাকুরিজীবিরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার আশঙ্কা জনকভাবে কমে গেছে।
শীতকালীন শাক-সবজি চাষে ও উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন কৃষক। তাছাড়া সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্য মতে জানা গেছে, উপজেলায় কলাগাছসহ দুই শতাধিক ফলজ বৃক্ষ উপচে পড়ে গেছে। রাস্তার ধারে অনেক পুকুর পাড়ে রোপন করা কলা গাছ ও ফলজ গাছ উপচে পড়ে যাওয়ায় অনেক রাস্তায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
ছোট মুজারের শাক-সবজি চাষি কৃষক ফেরদৌস, আরফোজ ও মানিক; বানেশ্বর্দীর হাসমত, সোহাগ, কেনু ও কাজল; কান্দাপাড়ার আজিজুল, গেন্দা মিয়া, ফরিদ, ফরহাদ ও ফারুক; ধুকুড়িয়ার হাশেম, হারুন ও নজরুল; বাছুর আলগার মোক্তার, আজিম ও মোকসেদ মাস্টার; ছালাতুল্লার মজনু, মোতালেব, ফোরকান, তমিজ উদ্দিন, ফয়সাল, আলীনাপাড়ার আনারুল, মিনারুল, ছাইদুল, মোসলেম উদ্দিন, হালিম, আব্দুর রশিদ ও মান্নান; ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্য কৃষাণি তাহমিনা, কৃষক জব্দুল, রায়হান, ছাইয়েদুল ও মোকলেছুর রহমান।
তারা জানায়, অন্য যেকোনো আবাদের তুলনায় শীতকালীন শাক-সবজি চাষে বেশি লাভ পাওয়া যায়; তাই তারা শীতকালীন শাক-সবজি চাষের জন্য জমি তৈরি করছিলেন। হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে সব আশা নষ্ট হতে চলছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি কয়েক দিন অব্যহত থাকলে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। দুই এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আর যেসব আমন ধানের ক্ষেতে পটাশ ও জৈব সার কম প্রয়োগ করা হয়, সেসব জমির ধান গাছ অপেক্ষাকৃত কম শক্ত থাকে বিধায় সামান্য বাতাস হলেই পড়ে যায়। তাই নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে পরিমিত পরিমাণে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপরেও অনেক কৃষক মনগড়াভাবে সার প্রয়োগ করেন বলেই হয়তোবা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তারা। তাছাড়া অনেক কৃষক উঁচু জাতের ধান রোপন করাতেও বাতাসে অনেক সময় ধান গাছ পড়ে যায়। তবে বর্তমানের বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাতে উপজেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, যেসব জমি শীতকালীন শাক-সবজি রোপনের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো, বৃষ্টিতে আপাতত সেসব জমির জোঁ নষ্ট হলেও, অতি তাড়াতাড়ি জোঁ এসে যাবে। আর যেসব জমিতে শাক-সবজি গজিয়ে গেছে, সে সব জমিতে বৃষ্টির পানি জমাট নাবাধলে, এই বৃষ্টি ক্ষতি করবে না; বরং ওই ফসলের উপকার হবে বলে তারা আশা ব্যক্ত করেন।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ