নীলফামারীর ডিমলায় মোহা. এনামুল হক (গ্রেনেট) উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেন ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর। যোগদানের পর হতে খাদ্য বিভাগের আগের সব নিয়মনীতি বদলে ফেলেন তিনি। তিনি নিজ ইচ্ছেমত খাদ্য গুদামে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ী ও ডিলারদের জিম্মি করে বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ আদায় করেন বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী।
ডিলার ও ব্যবসায়ীরা জানান, ঘুষের টাকা নেয়ার পর এনামুল হক বলেন, টাকার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তার ডিলারি আমি বাতিল করে দিব এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা আমার আছে।
জানা যায়, চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে হতদরিদ্রদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলায় নিয়োগ প্রাপ্ত ৪১ জন ডিলারের প্রত্যেকের কাছে তিনি অফিসিয়াল খরচ দেখিয়ে ১০০০ টাকা করে মোট ৪১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। খোলা বাজারের ৪ জন ডিলারের নিকট টন প্রতি ২০০ টাকা করে নেন। চলতি মৌসুমে ধান ছাটাই হয় ৩৮৭ মেট্রিক টন সেখানে প্রতি টনে ২০০ টাকা করে মোট ৭৭ হাজার ৪০০ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোপূর্বে পরিচ্ছন্ন কর্মি তহিদুল ইসলামকে গুদামের চাল চুরির সাথে জড়িত থাকার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক তার থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে পুনরায় নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমানে তহিদুল ইসলাম ডিমলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে পরিচ্ছন্ন কর্মি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কর্ম দিবসে সপ্তাহে দুই দিন অফিস করেন এবং কর্মস্থলে আসেন দুপুরে চলে যান বিকেল ৩টার মধ্যে।
এ বিষয়ে নীলফামারীর খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক ভুইয়া বলেন, সরকারী চালান বাদে কোন প্রকার লেনদেনের নিয়ম নেই। তিনি যদি সরকারী চালানের বাহিরে কোন প্রকার অর্থ গ্রহণ করে থাকেন (ঘুষ নিয়ে থাকেন), অফিস ফাঁকি দিয়ে থাকেন তবে বিষয়টি তদন্ত করে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক এনামুল হক টাকা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টাকাটা অফিসের অনলাইনের খরচ বাবদ নেয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্ন কর্মি নিয়োগে টাকা গ্রহণের অভিযোগটি সত্য নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি খাদ্য বিভাগে যোগদানের আগে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। সেখানে চাকরির শুরুতেই ফেন্সিডিল বহনরে অপরাধে চাকুরিচ্যুত হন এনামুল হক। বৈবাহিক জীবনে তিনি এক সন্তানের জনক। বিয়ে করেছেন দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ উপজেলায়। বিয়ের পর তার স্ত্রী (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা) জানতে পারেন স্বামী এনামুল হক মাদকাসক্ত। এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে কয়েকবার সালিশ বৈঠক হলেও এনামুলের কোন পরিবর্তন না হওয়ায় স্ত্রী ও সন্তান গত চার বছর ধরে বাবার বাড়ী দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে অবস্থান করছেন।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ