ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নূপুর আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূ পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে খুন হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) নূপুরের মা পারভীন বেগম বাদি হয়ে মামলাটি করেন। মামলা নম্বর-২৩।
মামলায় বোয়ালমারী পৌরসভার মধ্যেরগাতী গ্রামের কাওসার মোল্যার ছেলে নূপুরের স্বামী মুসা মোল্যাকে (৩৫) ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ব্রিটিশ ট্যোবাকো নামে সিগারেট কোম্পানিতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন মুসা। এ মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে নূপুরের পরকীয়া প্রেমিক (দ্বিতীয় স্বামী) মধ্যেরগাতী গ্রামের রিজাউল মোল্যার ছেলে নাঈম মোল্যা ওরফে লাদেনকে (২২)।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নূপুর আক্তার নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার নুর নবী খানের মেয়ে। অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই নূপুর তার মায়ের সাথে নানা বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার মধ্যেরগাতী গ্রামে মাকে নিয়ে তারা বসবাস করছিলেন।
নূপুর আক্তার যখন বোয়ালমারী উপজেলা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী তখন মুসা মোল্যার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নূপুর গর্ভবতী হয়ে পড়ায় এলাকাবাসীর চাপে উভয় পরিবার তাদের বিয়ে দেন। নূপুর-মুসা দম্পতির ফারিয়া (১৩) নামে একটি মেয়ে নিয়ে ভালোই সংসার চলছিল। ফারিয়া পৌর এলাকার বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।
এদিকে প্রায় এক বছর পূর্বে নূপুর পৌরসভার মধ্যেরগাতী গ্রামের রিজাউল মোল্যার ছেলে মুদিদোকানে বিক্রয়কর্মী নাঈম মোল্যা ওরফে লাদেনের (২২) সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। অন্তত গত এক বছরে নূপুর আক্তার তিনবার নাঈমের সাথে চলে গিয়ে আবার ফিরে আসে। এক পর্যায়ে প্রেমিক নাঈমের সাথেও নুপুরের বিয়েও হয় বলে জানা যায়।
চলতি বছরের ৭ অক্টোবর এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আগামী তিন মাস নূপুর আক্তার নিজ বাড়িতে থাকবেন; মুসা কিংবা নাঈম কারো সাথেই যোগাযোগ রাখতে পারবেন না। তিন মাস পর নূপুর তার সিদ্ধান্ত জানাবেন তিনি (নূপুর) কার সাথে সংসার করবেন। সে মোতাবেক সালিশদাররা তার হাতে তুলে দিবেন।
কিন্তু প্রেমিক নাঈম গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে নূপুরের সাথে দেখা করতে এলে উত্তেজিত মুসা হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূপুরকে মেয়ের সামনেই এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে নূপুরের অবস্থার আরো অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে শুক্রবার ভোররাতে সে মারা যায়। ঘটনার পরে স্বামী মুসা ও প্রেমিক নাঈম উভয়েই পালিয়ে যায়। রোববার সকালে নূপুরের মা পারভীন বেগম বাদি হয়ে দুইজনের নামে বোয়ালমারী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে শনিবার বিকেলে পুলিশ নূপুরের স্বামী মুসাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুর রহমান জানান, মামলার প্রধান আসামি মুসা মোল্যাকে ঢাকার হেমায়েতপুর ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর পলাতক আসামি নাইমকে গ্রফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, রোববার ঘটনাস্থলের বাড়ির পাশের বাগান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামিকে আলামতসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ