ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বৈধ পেশার আড়ালে ছিনতাই করে ওরা 

প্রকাশনার সময়: ২১ অক্টোবর ২০২২, ১৬:২৪

বৈধ পেশার আড়ালে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড ও গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই করতো চক্রটি। এসব চক্রের অন্যতম মূলহোতা শরীফ হোসেন (২২)সহ ৫ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১। এসময় বিপুল পরিমাণ চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে র‍্যাব-১এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব তথ্য জানান। বলেন, ‘মূলত এরা ছিনতাইকারীদের শেল্টারদাতা হিসেবে কাজ করেন।’

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা মোঃ শরীফ হোসেন (২২), তার সহযোগী আব্দুল্লাহ বাবু (২৩) ও মোঃ শ্যামল হোসেন ওরফে রাব্বিকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আসামিদের নিকট হতে ছিনতাইকৃত ১ টি মোটরসাইকেল, ১০ টি মোবাইল ফোন, ১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ২৫ হাজার ৬৩৫ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা হতে অন্যান্য জেলা অভিমুখে যাতায়াতকারীদের এক বিশাল অংশ আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা দিয়ে ভ্রমণ করার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, গাড়ী, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই করে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। এর ফলে দুই ধাপে ছিনতাইকারী চক্রের ৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গি স্টেশন রোড পর্যন্ত ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড শরীফ হোসেন (২২) ও তার সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতার করে।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, আটক আসামিদের দেয়া তথ্যমতে শুক্রবার ভোর রাতে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাই চক্রের অপর সক্রিয় সদস্য নাছির রাজ (৩০), সাজেদুল আলম ওরফে শাওনকে (২১) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় আসামিদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ৪৯টি মোবাইল, ২টি সিপিউ, ২টি মনিটর, ২টি মাউস, ২টি কি-বোর্ড, ২টি ক্যাবল, ১টি সিসি ক্যামেরা, ১টি ডিভিআর, ১টি চার্জার, ১টি হাত ঘড়ি, ২টি ভিসা কার্ড এবং নগদ ৩ হাজার৭৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, শরীফ হোসেন এ চক্রের অন্যতম মূলহোতা ও মাষ্টারমাইন্ড। সে উত্তরা আজমপুর হতে আব্দুল্লাপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে টঙ্গি স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়কের ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতা। সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত ছিচকে চোর ও ছিনতাইকারী চক্র চলন্ত গাড়ি হতে থাবা দিয়ে কিংবা অন্ধকারে নিরীহ পথচারীদের জিম্মি করে যে সকল মোবাইল ফোন ছিনতাই করতো সে সেই মোবাইলগুলো তার কাছে জমা করত। সে স্বল্পমূল্যে এ সকল মোবাইল কিনে অপর দুই আসামি আব্দুল্লাহ বাবু ও শ্যামলের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করত। সে গত ০৫ বছর ধরে এ কাজের সাথে জড়িত। একদিনে শরীফ সর্বোচ্চ ৫০টি পর্যন্ত মোবাইল ফোন সংগ্রহ করার রেকর্ড করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা য়ায়।

আব্দুল্লাহ বাবু ও শ্যামল: ছিনতাইকৃত মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল বিক্রয়ের কাজে জড়িত। তারা ধৃত আসামি শরীফ এবং গত ০৫ অক্টোবর র‌্যাব-১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত আরেকটি ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম হোতা জয় (২২) এর কাছ থেকে চোরাইকৃত মোবাইল সংগ্রহ করে বিক্রয়ের কাজ করত। তারা বিভিন্ন দোকান, অনলাইন প্লাটফর্ম ও বিভিন্ন জনের কাছে খুচরা হিসেবেও এসব মোবাইল বিক্রি করত। তারা ছিনতাইকৃত মোবাইল বাজারমূল্যের চাইতে প্রায় অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করত।

নাছির ও শাওন : মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। টঙ্গি বাজারে নাছিরের একটি মোবাইল মেরামতের দোকান রয়েছে। সে উক্ত দোকানে বৈধ ব্যবসার আড়ালে চোরাই মোবাইল এর লক খোলা ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের কাজ করে থাকে। সে ৩ বছর যাবত নিজস্ব দোকানে ব্যবসা করে আসছে। নিজের দোকানে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে নাছির অন্য একটি দোকানের কর্মচারী ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। শাওন (২১) একটি মোবাইল মেরামত দোকানের কর্মচারী। সে ৫০০-১০০০ টাকার বিনিময়ে ছিনতাইকৃত মোবাইলের লক খোলা এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের কাজ করত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা মো. শরীফ হোসেন (২২)। তার সহযোগী ৪ জনসহ চক্রের প্রতিটি সদস্য বর্ণিত এলাকায় তার নির্দেশে ছিনতাইয়ের মালামাল বিক্রির কাজ করে থাকে। তারা প্রত্যেকে বৈধ পেশার আড়ালে ছিনতাইকারী চক্রের মদদাতা ও আশ্রয়দাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ