কক্সবাজারের রামুতে বজ্রপাতে ৩টি গরু ও ১টি ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের একমাত্র সম্বল হারিয়ে মরা গরুর সামনে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দরিদ্র দিনমজুর নুর আহমদ।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে আকস্মিক বজ্রপাতে তার স্বপ্ন খান খান হয়ে গেছে। কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম মনিরঝিল দরগাহপাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
জানা যায়, গরু ও ছাগল গোয়াল ঘরেই বাঁধা ছিল। এসময়েই আকস্মিক বজ্রপাতে ৩টি গরু, একটি ছাগল এবং একটি মুরগি মারা যায়। দারিদ্র্যতা থেকে স্বচ্ছল হওয়ার সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই উবে গেছে হতভাগা নুর আহমদের। ঋণের টাকায় কেনা গরু ও ছাগল হারিয়ে দিনমজুর এখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপরই মৃত গরুগুলোর একটি পর একটি জড়িয়ে ধরে কেবল বিলাপ করছেন তিনি। চোরের ভয়ে গোয়ালেই রাত কাটাতেন নুর আহমদ।
নিজের কোনো জায়গা জমি নেই। দিনমজুরি করে কোনো রকমে দিন কাটান নুর আহমদ। ভাগ্য বদলাবার আশায় তিনি দুই বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ৩টি গরুর বাচ্চা ও একটি ছাগল কেনেন। এগুলোকে খাইয়ে মোটা তাজা করার সেই যে কি রকমের চেষ্টা পরিবারটির। দিনমজুর নুর আহমদের চার সন্তানের মতো গরুগুলোও ছিল তার অত্যন্ত আদরের। এগুলোকেও তার সন্তানের মতো করে লালন-পালন করছিলেন তিনি।
এসব গরু-ছাগল মোটাতাজা করে বিক্রি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। বাড়তি টাকা ঋণ পরিশোধ করবেন। নতুন করে আবারো গরুর বাচ্চা কিনে মোটাতাজা করবেন। এভাবে তিনি দারিদ্র্যতা থেকে স্বচ্ছল মানুষ হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। এরকম কতইনা স্বপ্ন তিনি দেখতেন।
চার সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে নুর আহমেদের সংসার। গরুগুলো ছিল যেন পরিবারের চোখের মণি। সন্তান, স্ত্রী ও তিনি নিজে পালাক্রমে এগুলোর খাবার আর যত্ন নিতেন। দিন দিন বেড়েই উঠছিল গরুগুলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দিনমজুর নুর আহমদের ভাগ্যের চাকা আর ঘুরতে দিল না। বজ্রপাতে তার স্বপ্ন মুহূর্তে ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে। এখন ঋণের এত টাকা কীভাবে শোধ করবেন তিনি- এজন্য পরিবারের সদস্যরা সবাই আহাজারি করছেন।
দিনমজুরের শেষ সম্বলটুকু হারানোর খবর পেয়ে বিকেলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা ক্ষতিগ্রস্ত নুর আহমদের ঘরে যান। এসময় তিনি কৃষকের পরিবারকে সান্তনা জানান এবং তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন।
ইউএনও’র সঙ্গে যান উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। তারা জানান, প্রাণীগুলো মারা যাওয়ায় কমপক্ষে দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এই হতভাগার।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ