পটুয়াখালীতে পৌরসভা, উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের পতন ঘটার পিছনের নেপথ্যে রয়েছে দলীয় কোন্দল ও কালো টাকার নগ্ন থাবা। পটুয়াখালী জেলায় পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, লেবুখালী সেতু, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজসহ অসংখ্য উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। তবুও আওয়ামী লীগের এমন পতনের জন্য হতাশ আওয়ামী লীগের দলীয় অনেক নেতাকর্মীরা।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শতাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খলিলুর রহমান মোহন। আর এই হারের জন্য দলীয় ঐক্যের ঘাটতি, তৃণমূলে যোগাযোগের অভাব ও জনপ্রতিনিধিদের অর্থ লোভসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।
জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহানুর রহমান সুজন সোমবার রাতে তার ফেসবুকে লিখেছেন, বাউফলের এমপি, মির্জাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, দশমিনা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীর পরাজয়ের মূল হোতা ও তাদের সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জোবায়দুল হক রাসেল তার ফেসবুকে লিখেছেন, যেখানে আপার সঙ্গে বেইমানি! দুর্দিন বলতে কিছু নেই? টাকা সব বদলে দেয়? কেন্দ্রীয় এক নেতার লন্ডনে বাড়ির বিনিময়ে স্বতন্ত্র নির্বাচিত পটুয়াখালী?
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হৃদয় আশিষ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আপনাদের জেতালো তার পুরস্কার এই হার ধরে নিলাম। হিসাব দেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন।
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খলিলুর রহমান মোহন বলেন, রাজনীতিতে আমি ও আমার পরিবারের অবদানের পুরস্কার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এর আগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন। এবারেও তিনি আমাকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তার নির্দেশে পটুয়াখালীতে ফিরে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যেক উপজেলায় ভোটারদের নিয়ে সভা করি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ৭৭টি ইউনিয়নের ৪২টি ইউনিয়নে সফর করে ভোটারদের ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করি। কিন্তু সার্থ হাসিল ও ব্যক্তিগত কোন্দলের কারণে দলীয় নেতারা তৃণমূলে সঠিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কালো টাকার প্রভাবের কারণে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটে পরাজিত হই। বিশেষ করে বাউফল উপজেলায় ২০৭ ভোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী পেয়েছেন ১৪৭ ভোট আর আমি পেয়েছি মাত্র ৬০ ভোট। ৮৭ ভোট কম পাওয়ার দায় কার? যেখানে অওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পরপর সাতবার নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল পরপর দুবার বাউফল পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব মোল্লা বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান সেই আওয়ামী লীগের দূর্গ খ্যাত এলাকায় এমন হলো কেনো? এই মুহুর্তে কোন্দল না ঘোচালে ভবিষ্যতে দলের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলার বিগত চারটি পৌরসভা দুজন মেয়র , আটটি উপজেলা পরিষদের মধ্যে দুইজন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচিত হন। এছাড়াও জেলার মোট ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ছয়টি ধাপে ৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৪টিতে নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এছাড়াও একটি ইউনিয়নে বিএনপি ও একটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, আমাদের প্রার্থী কালো টাকার প্রভাবের কাছে হেরে গেছে। রাজনীতি এখন টাকার কাছে জিম্মি।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ