খুলনার বাজারে তিন সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি এ মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। ফলে বাজারে গিয়ে মুরগি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ এখন ব্রয়লার মুরগি খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। কমে গেছে বিক্রিও।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের মতো। আর গত এক মাসে এই মুরগির দাম বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পাশাপাশি ফার্মের অন্যান্য মুরগির দামও বেড়েছে। লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা কেজি এবং সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস ৭০০ টাকা, আর খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাড়ার তালিকায় রয়েছে ডিমও। ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। অনেক দোকানি প্রতি হালি ডিম বিক্রি করছেন ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়।
এদিকে, আবারও বেড়েছে মোটা চালের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে এক টাকা।
টিসিবির তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশের মতো। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে মোটা চালের দাম ছিল ৪৭ টাকা কেজি, এ সপ্তাহে সেই একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। তবে গত সপ্তাহে যে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫২ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেতো, এ সপ্তাহেও সেই চাল একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরু চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বিক্রি বেশি। ভালো মানের মিনিকেট ৭৫ টাকা আর নাজিরশাইল কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ৮৫ টাকা। বাজারে আটাশ চালের কেজি ৬০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৫ টাকা, স্বর্ণা ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
একই সাথে বাজারে বেড়েই চলছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তিন-চার দিনের ব্যবধানে পুনরায় বেড়েছে চিনির দাম। প্রতি কেজি চিনি এখন ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৮৪ থেকে ৮৮ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে ৫০ কেজির চিনির বস্তা কিনতেন ৪২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩০০ টাকায়। দুই দিন আগে চিনি কিনতে হয়েছে ৪৫০০ টাকায়। তবে প্যাকেটজাত চিনির দাম গত এক সপ্তাহে বাড়েনি। সেগুলো প্যাকেটের গায়ে লেখা দামেই (৯৫ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে শিম, টমেটো ও গাজর। অন্যান্য সবজির সর্বনিম্ন দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকা। শনিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, কুশি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, শীতকালীন শিম ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন (৫ লিটার) তীর, ফ্রেশ, রুপচাঁদা ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যা এক মাস আগে সয়াবিন (৫ লিটার) তীর, ফ্রেশ, রুপচাঁদা ১ হাজার ৫ টাকা দরে। নগরীর বড় বাজারের মেসার্স দিনাজপুর ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক শেখ বলেন, ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে মূলত চালের দাম বাড়তি। ধানের দাম যখন কম থাকে তখন চালের দামও কমতে শুরু করে।
বড় বাজারের মেসার্স তরুণ স্টোরের স্বত্বাধিকারী তরুণ কুমার সরকার বলেন, মিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বাড়তি।
ব্যবসায়ী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, চালের বাজার মোটামুটি বাড়তি। বড় ব্যবসায়ীরা যখন চালের দাম বাড়িয়ে দেয় তখন খুচরা বাজারেও চালের দাম বেড়ে যায়।
ব্যবসায়ী মো. সলেমান শেখ বলেন, চালের বাজার একটু বাড়িত। খুচরা ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম মোল্লা বলেন, চালের বাজার বাড়তি। মিলারদের কারণে চালের দাম বাড়তি। মিলাররা বেশি লাভের আশায় ধান-চাল মজুদ করে রাখে। বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে চায়। যখন কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়, তখন চালের দাম অনেক বেড়ে যায়।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো. বারেক শেখ বলেন, সোনাডাঙ্গা পাইকারি কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ অনেক কম। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেশি থাকায় সবজির দামও বাড়তি।নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ