চট্টগ্রামে আগামী ডিসেম্বর উদ্বোধন হবে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। উদ্বোধনের এ দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে অর্থনৈতিক কর্ম চাঞ্চল্য। এরইমধ্যে টানেলের ছয় লেনের সংযোগ সড়কের চার লেনের কাজ শেষ পর্যায়ে।
ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শুধুমাত্র কেইপিজেডে বার্ষিক রফতানির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। টানেল চালুর পর এক বছরে এই অঞ্চলে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ হবে দ্বিগুণ। এক বছরে তা ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, টানেল চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম হবে একটি সমন্বিত বিজনেস হার। নতুন নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নতুন নতুন শাখা হচ্ছে। এতে বিপুল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যও বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব হবে। এছাড়া দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানসহ পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর এই ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
ইতোমধ্যে আনোয়ারা ৭৮৩ একর জমিতে ইকোনমিক জোনের কাজ চলছে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর চট্টগ্রামকে একটি ইকোনমিক হাবে পরিণত করতে সরকারি-বেসরকারি কর্মযজ্ঞ চলছে। গড়ে উঠছে উৎপাদনমুখী বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র কেইপিজেডে বর্তমানে এক বছরে রফতানির পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এসব পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক ও আরও নানা প্রক্রিয়ায় তাদের আমদানি করতে হয় ৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য।
কেইপিজেডের মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, আগামী এক বছরে এই রফতানি দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। টানেল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আনোয়ারায় এর মধ্যে কার্যক্রম শুরু ২০ তফসিলি ব্যাংকের অন্তত ২৫ শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট আউটলেট। এসব শাখা-উপশাখায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কর্পোরেট হাউস ও শিল্পোদ্যেক্তাদের প্রায় কোটি ২ হাজার কোটি টাকার আমানত জমা রয়েছে। বিপরীতে উদ্যোক্তাদের কাছে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াইশ‘ কোটি টাকা। অনলাইন মাধ্যমে, এটিএম ছাড়া শুধুমাত্র ব্যাংকের কাউন্টার থেকে নগদ জমা, উত্তোলন মিলিয়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এই উপজেলায় বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক তাদের ৩টি শাখা চালু করেছে। টানেল উদ্বোধনকে টার্গেট করে বন্দর সেন্টার এলাকায় তারা আরেকটি উপশাখা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই তিন শাখায় আমানতের পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা, বিনিয়োগ ৭০ কোটি ও দৈনিক লেনদেন ১০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা ও এক উপশাখায় রয়েছে ২৫০ কোটি টাকার আমানত, ৩০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ১০ কোটি টাকার দৈনিক লেনদেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা ও দুই উপশাখা, এবি ব্যাংকের একটি শাখা ও একটি এজেন্ট আউটলেট ও আল আরাফা ব্যাংকের একটি শাখার প্রতিটিতে আমানতের পরিমাণ একশ’ কোটি টাকার বেশি বলে জানা গেছে। বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এ মাসেই এক্সিম ব্যাংক, বেঙ্গল ব্যাংক , কমার্স ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের নতুন শাখা চালু করতে যাচ্ছে।
এক্সিম ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান ড. এসএম আবু জাকের বলেন, উত্তর দিকে চট্টগ্রাম শহর যতটুকু সম্প্রসারণ হয়েছে, দক্ষিণে ততটা হয়নি। টানেল সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
এবি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার প্রধান মোহাম্মদ মোরশেদ আলী বলেন, আনোয়ারায় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হচ্ছে। যার সবটাই শহরের ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। এখানকার শাখাগুলো চাইলে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
বেঙ্গল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা প্রধান মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, টানেল সুবিধাকে কাজে লাগাতে আগ্রাবাদের পর তার ব্যাংকের দ্বিতীয় শাখা হচ্ছে আনোয়ারায়।
ইউসিবিএলের আনোয়ারা শাখা ব্যবস্থাপক তৌফিকুর রহমান বলেন, টানেল ঘিরে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ছে। তারা এর মধ্যে টানেলের টোল ফি কালেকশনের কাজ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বলেন, আনোয়ারায় কেইপিজেডসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম আনোয়ারায় ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে করা গেলে ব্যাংকিং সেক্টরের চিত্র পাল্টে যাবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সিরাজউদ্দৌলা খান বলেন, তার ব্যাংকে শুধুমাত্র এটিএম বুথে মাসিক উত্তোলন ৫ কোটি টাকা। এতে আনোয়ারায় ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি সহজে বেড়ে যাবে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ