বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। জন্মভূমি নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়।
এস এম সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নড়াইল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মাহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, সংগ্রহশালা চত্বরে সোমবার (১০অক্টোবর) সকালে কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল ও শিল্পীর সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
একজন সুলতান
এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়ায় রাজমিস্ত্রি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন এস এম সুলতান। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন।
যেভাবে ছবি আঁকা শুরু
বাবাকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছবি আঁকতেন সুলতান। ১৯৩৩ সাল, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন তিনি। জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা। মানুষের মুখে তাঁর নাম পড়ে। ১৯৩৮ সালে চলে যান ভারতের কলকাতায়। চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় হয়। অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করেন।
ছবির জন্য
কলকাতা আর্ট স্কুল ছেড়ে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সঙ্গে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকাভিত্তিক ছবি আঁকেন। ১৯৪৫ মতান্তরে ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের লাহোরেও চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকায় যান সুলতান। এরপর ইউরোপে বেশ কয়েকটি একক ও যৌথপ্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি। এ সময় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লীসহ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের ছবির পাশে এস এম সুলতানের ছবি স্থান পায়।
ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শি¶ার পাশাপাশি চারুকলা শি¶ার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। অবশ্য অনেক আগেই স্বপ্নের শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। এদিকে সুলতান তাঁর সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করিয়েছিলেন। সুলতান তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে খেটে খাওয়া মানুষ এবং সংগ্রামী জীবনের কথাই বেশি চিত্রিত করেছেন। রয়েছে পরিবেশবন্ধু বৃক্ষরোপণের ছবিও।
ভালোবসতেন সুরযন্ত্র, ভালোবাসতেন পশু-পাখি
চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি এবং সুরযন্ত্র বাজাতেও পটু ছিলেন সুলতান। বিষধর সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি পুষতেন। তিনি হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পছন্দ করতেন না বলে জানিয়েছেন সুলতানশিষ্য চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারীসহ ভক্তরা।
ভাণ্ডারে তাঁর বিবিধ অর্জন
চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’ ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন। এছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ