ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন, লাখো মানুষের মিলনমেলা

প্রকাশনার সময়: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১৮:২৮

কক্সবাজারে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব মহানবমী ও বিজয়া দশমী পালনের পর প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে। প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে লাখো মানুষের মিলনমেলা। ওই মিলনমেলায় সামিল হন দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও।

পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সম্প্রতির সেতুবন্ধন তৈরিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে সামিল হন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। অশ্রুসজল চোখে আরও একটি বছরের জন্য দেবীকে বিদায় জানানো হয়। আগামী বছর দেবীর পুনরাগমনের আশায় বুক বাঁধবেন সকলে। দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামীগৃহে গমনের পাঁচ দিন পরেই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন তিনি।

প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজে মাঠে সদা তৎপর ছিল র‍্যাব। এছাড়াও আনসার, ভিডিপি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার জন্য কাজ করে। এ মিলনোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান নওফয়েল এমপি।

বুধবার বিকেলে দেখতে দেখতে সকল আনন্দ ছাপিয়ে বেজে উঠল বিষাদের সানাই। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দুর্গতিনাশিনীর মর্তে আগমন, দশমীবিহিত পূজা শেষে কৈলাস যাত্রা তার। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে সকাল থেকেই একে একে নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে ট্রাকে তোলা হয় প্রতিমাগুলো। এ সময় শহরের প্রতিটি পূজা মণ্ডপে বেজে উঠে বিদায়ের সুর। এরপর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সঙ্গীতের মূর্ছনায় নেচেগেয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে প্রতিমাবাহী ট্রাকগুলো। পথে পথে বাড়তে থাকে শোভাযাত্রার কলেবর। শোভাযাত্রা শেষে সৈকতে একে একে সাজিয়ে রাখা হয় প্রতিমাগুলো। মাইকে ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠে শংখ, উলুধ্বনি, বাদ্যের ঘণ্টা। কণ্ঠে ‘জয় দুর্গা মায়ের জয়’ আর চোখে জল নিয়ে একের পর এক সাগরে উত্তাল টেউয়ে ভাসানো হয় প্রতিমা।

খুলনার খালিশপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সোহেল শর্মা-কাকলী বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের এই দৃশ্যটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কক্সবাজার সৈকতে এই মিলন মেলা না দেখলে বুঝা যাবেনা বাংলাদেশ যে একটা সম্প্রীতির দেশ।

রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধ ও পূজার ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। বিসর্জনের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেখে খুবই ভালো লাগছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন হলেও সৈকতে নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের মিলন ঘটে। বিসর্জন দেখতে আসা মালা রাখাইন বলেন, আমরা বন্ধু-বান্ধব প্রতিবছরই বিসর্জন দেখার জন্য সৈকতে আসি। গতবছর করোনার কারণে আসেনি। এবারে অনেক ভালো লাগছে।

আয়োজকরা জানান, শুধুমাত্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ৮০টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। এছাড়া একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রামুর কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের পুরোহিত সুবীর ব্রাহ্মণ চৌধুরী বলেন, এবার মা দুর্গা এসেছেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। যাচ্ছেনও ঘোড়ায় চড়ে।

এ কারণে এবার আমরা ঝড় ঝাপটার আশঙ্কা করেছিলাম। তাই মা দুর্গার কাছে আমাদের বিশেষ প্রার্থনা ছিল- প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায়। মা দুর্গা আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন। যে কারণে আবহাওয়া আমাদের অনুকূলেই ছিল।

সৈকতের বালিয়াড়িতে সরেজমিন দেখা যায়, ভক্ত, পূজার্থী, দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও সকল ধর্মের মানুষ বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনে শামিল হয়েছেন। সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও দক্ষিণে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের তিন কিলোমিটার বেলাভূমিজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক দৃষ্টান্ত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব নির্বিঘ্নে করতে আগে থেকেই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয় পুরো কক্সবাজার জেলায়। তাছাড়া যে কোন প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ভক্তদের ভোগান্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পুরো এলাকায় জোরদার রয়েছিল প্রশাসনের নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রতিবারের মতো কক্সবাজার জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের উদ্যোগে ও কক্সবাজার পৌরসভার সহযোগিতায় এবারও সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট বাবু উজ্জল করের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম , র‍্যাব ১৫ এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, এ বছর জেলায় ৩০৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর জানান, দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান এটি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে এই উৎসবটি ব্যাপকভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় কয়েকশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ