ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

২৭৭ ভূমিহীনের ভাগ্য বদল তেঁতুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প

প্রকাশনার সময়: ০৯ আগস্ট ২০২১, ২১:৩১

কেউ থাকত অন্যের জমিতে বাড়ি করে, কেউ থাকত অন্যের বাড়িতে ভাড়া, আবার কেউ থাকত খাসজমিতে ভাঙাচোরা ঘরে। তাদের দুই মাস আগেও ছিল না কোনো স্থায়ী ঠিকানা। দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ২৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর দেয়া হয়েছে। এসব ঘর পেয়ে বদলে গেছে এসব সুবিধাভোগী মানুষের জীবনমান। ফলে সমাজের আর দশজন মানুষের মতো সুন্দরভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন তারা।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার এই ঘরগুলো পেয়ে হাসি ফুটছে এসব ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন ও দুর্ভোগ পোহানো মানুষের মুখে। টেকসই ও মজবুত পাকা ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন। এই সুবিধা পেয়েছেন প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা।

জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ১৪২টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩৫টিসহ মোট ২৭৭টি ঘর বরাদ্দ পাওয়া যায়। জমি নেই ঘর নেই এমন ‘ক’ তালিকাভুক্ত। ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন ‘খ’ তালিকাভুক্ত এবং ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে, ঘর আছে কিন্তু জরাজীর্ণ এমন ‘গ’ তালিকাভুক্ত মোট ২৭৭টি পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাদ্রবাড়ি এলাকার উপকারভোগী গোপাল চন্দ্র বলেন, আগে আমরা ছোট ভাঙা ঘরে শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট করে বসবাস করতাম। এখন আর ভাঙা ঘরে থাকতে হয় না। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেয়ায় এখন আমরা সুখে দিন কাটাতে পারছি। রাতের বেলা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আগের মতো কষ্ট আর করতে হয় না।

নতুন ঘর পেয়ে উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের রণচণ্ডী এলাকার মালেকনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আব্দুল আলিম বলেন, নিজের জমি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জমিতে ভাঙা ঘরে বসবাস করেছি। পরে অনেক কষ্ট করে স্বামী-স্ত্রী মিলে জমি কিনতে পারলেও ঘর করার সামর্থ্য ছিল না আমার। পরে সরকার আমাকে ঘর করে দিয়েছে। পাকা ঘর। ঘরের সঙ্গে টয়লেট, টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এখন নিজের জায়গায় পাকা ঘরে থাকতে পারছি। পাকা ঘরে আমার মতো নগণ্য মানুষ থাকব কখনো স্বপ্নেও দেখিনি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রীকে।

এমন কথা এখন সুবিধাবঞ্চিত অসহায় এসব মানুষের মুখে মুখে। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নতুন ঘর পেয়ে কষ্ট দূর হয়েছে। শেষ বয়সে সরকারের দেয়া অনেক সহযোগিতা পেয়ে এখন আমরা অনেক সুখে আছি। এখন আমরা দিনে কাজ করি রাতে পাকা ঘরে শান্তিতে ঘুমাই।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করে মোট ২৭৭টি পরিবারকে মুজিব শতবর্ষ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণ শেষ করে আমরা উপকারভোগী পরিবারগুলোর মাঝে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছি। উপকারভোগীরা নতুন ঘর পেয়ে পরিবার- পরিজন নিয়ে এখন সুখে দিন অতিবাহিত করছে। আমি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের এই ঘরগুলোর চাবি তেঁতুলিয়া উপজেলাসহ ৫ উপজেলার স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগী পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা ঘর পেয়েছেন তারা আনন্দে ও স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছেন।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ