ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পুলিশের সহায়তায় মাদক দিয়ে চাঁদাবাজি

পুলিশ সুপারের কাছে অটোচালকের অভিযোগ
প্রকাশনার সময়: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৩১ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৩৬
চক্রের সদস্য বা থেকে মনির, মুবিন এবং মির্জাগঞ্জ থানার এসআই জালাল আহম্মেদ

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে এক অটোচালককে অভিনবভাবে মাদক দিয়ে পুলিশের সহায়তায় চাঁদাবাজির এক অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) পটুয়াখালী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী স্বপন ফরাজী নামের ওই অটোচালক। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সুবিদখালী লঞ্চঘাট সিনেমাহল এলাকায় অটোচালককে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনাটি ঘটে। এদিকে মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ বলছেন, মাদক দিয়ে ফাঁসিয়েছেন স্থানীয় একটি চক্র, এখানে পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমন ঘটনায় পুলিশ ও ওই চক্রের আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।

অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানা যায়, ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় অটোচালক স্বপন ফরাজীর চলন্ত অটো থামিয়ে ৩ জন যাত্রী ওঠে, যাদের নাম মনিরুল ইসলাম (কালা মনির), পল্লব ও তারিকুল ইসলাম সুজন। পরে ওই অটোচালককে সুবিদখালী লঞ্চঘাট সিনেমাহল এলাকায় নিয়ে যায়। অটোচালককে বলে তোর সাথে মাদক আছে, আামাদের কাছে খবর আছে তুই ইয়াবার ব্যবসা করো। এমন কথায় অটোচালক অস্বীকৃতি জানালে কালা মনির বলে তোকে সার্চ করবো, তোকে কিন্তু অ্যারেস্ট করবো। সাথে সাথে ঘটনাস্থলে আসেন ওই চক্রের আরেক সদস্য মেহেদি হাসান মুবিন। এ সময়ে মনির তার পকেট থেকে তিন পিস ইয়াবা বের করে অটোর সামনে থাকা ছোট্ট ক্যাশবাক্সের (কাটা ড্রাম) মধ্যে ইয়াবা রাখেন। এরপর তিনজন সদস্য মিলে অটোচালককে বলেন, তুই এখন ৫০ হাজার টাকা দিবি, না হয় তোকে কিন্তু অ্যারেস্ট করবো, থানার পুলিশ দিয়ে তোকে ধরাবো। পরে ওই অটোচালক বলেন, আমি গরিব মানুষ, অটো চালিয়ে সংসার চালাই; আমি টাকা কোথায় পাবো? এমনটা বললেই তিনজন মিলে মারধর শুরু করেন এবং সাথে থাকা আর একজন (সুজন সিকদার) অটোচালকের হাতে ইয়াবা দিয়ে ভিডিও করেন। এরপরেও অটোচালক টাকা দিতে না চাইলে মির্জাগঞ্জ থানায় ফোন দেয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য আসেন যার নাম এসআই জালাল আহম্মেদ।

ভুক্তভোগী স্বপন ফরাজী জানান, পুলিশের এসআই জালাল স্যার এসে আমার হাতে হাতকঁড়া লাগায়। পরে আমাকে হাসপাতাল চত্বরের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বলেন, তুমি কি করো বা না করো এটি দেখার বিষয় না, মাল (ইয়াবা) যেহেতু পেয়েছে তুমি এদের সাথে টাকা পয়সা দিয়ে মিটমাট করো। এমনটা বলে জালাল স্যার ইয়াবা ওদের কাছে রেখেই চলে যায় এবং তাদেরকে বলে আপনাদের সাথে পরে দেখা করবো। পরে আমি এক প্রকার বাধ্য হয়ে আমার আত্মীয় স্বজনদের ফোন দিলে আমার বড় ভাই আমিনুল ইসলাম ও স্ত্রী মুক্তা বেগম ১২ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে আসে। সেই টাকা কালা মনিরের হাতে দিলে আমাকে ছেড়ে দেয় এবং বলেন, এই কথা বাহিরে জানাজানি করলে তোকে আবারো অ্যারেস্ট করবো।

ওই অটোচালক আরও জানান, শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হলে, ওইদিন রাতে ওই চক্রের সদস্য মুবিন আমার স্ত্রীর ফোনে ফোন দিয়ে নানাভাবে হুমকি দেয় এবং বলেন তোর স্বামীর হাতে রাখা ইয়াবার ভিডিও আমাদের কাছে আছে। এটি ফেইসবুকে ছেড়ে দিলে যে কি হবে ভেবেও পাবি না। পরে আমি কোনো কূল না পেয়ে এসপি অফিসে যাই এবং এসপি স্যারের কাছে আমি আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসছি।

এ ব্যাপারে কথা হয় ওই চক্রের সদস্যদের সাথে তখন মুবিন ও মনির মুঠোফোনে জানান, এসআই জালাল যাওয়ার পরে আমরা গিয়েছি, কোনো ধরনের টাকা পয়সা লেনদেন হয়েছে কিনা, আমার জানা নাই। মনির বলেন, আপনি তদন্ত করেন যা শোনার তো শুনছেনই। আরও বক্তব্য লাগলে আমার সামনে আসেন বক্তব্য দিবো আনে ঠিকমতো।

এসআই মো. জালাল আহম্মেদ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি সত্য, তবে ওই অটোচালকের কাছে কোনো মাদক ছিলো না। পরে আমি তাদের সাথে মিটমাট করতে বলে চলে আসছি। তারা আসলে বাঁচার জন্য আমার নাম ব্যবহার করতেছে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে সব ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ