হবিগঞ্জের মাধবপুরে ১০টিরও বেশি স্পট থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি। কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি ও বালু। প্রতিদিন ট্রাক-ট্রাক্টর যোগে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বালু। অবৈধ এ কার্যক্রমে একদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব, অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে শত শত বিঘা উর্বর ফসলি জমি ও পাহাড়। চোরাই পথে বালু-মাটি উত্তোলন ও বিক্রয়কারী সিন্ডিকেটের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বৈধ বালু মহাল ইজারাদাররা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন চৌমুহনী ইউনিয়নের রাবার ড্যাম, বহরা ইউনিয়নের ঘিলাতলী আখড়াসহ গত ২৫ জুলাই অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিলেও উপজেলার উত্তরাঞ্চলের নয়াপাড়া ও বাঘাসুরার অবৈধ বালু-মাটি উত্তোলন কারীরা এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১১নং বাঘাসুরা ইউনিয়নের বাখরনগর, কালিকাপুর, সুন্দরপুর, শাহজিবাজার রাবার বাগান, রঘুনন্দন ফরেস্ট এলাকায় চলছে অনুমোদনহীন বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব।
গত ৮ জুন রাতে মাধবপুর থানার এস আই আব্দুল ওয়াহেদ গাজী সুন্দরপুর এলাকা থেকে চোরাই বালুভর্তি একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট-১৮-৩৬৭৮) আটক করে। এ সময় শিপন মিয়া নামে একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পলাতক রয়ে যায় সুন্দরপুর গ্রামের মৃত আছকির মিয়ার পুত্র হেলাল মিয়া (৩৮)।
বালু চুরি করে উত্তোলন ও বিপননের অপরাধে মাধবপুর থানায় মামলা রুজু হলেও বালু চোরদের দমানো সম্ভব হচ্ছে না। আরো বেপরোয়াভাবে দরগা গেইট এলাকায় কাজল এবং সুন্দরপুর এলাকায় হেলাল বালু উত্তোলন ও বিপনন কার্যক্রম চালাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলায় তিনটি সিলিকা বালু মহাল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে মনতলা, মনতলা চৌমুহনী ও রসুলপুর শাহজাহানপুর। গত বছরের ২৮ এপ্রিল মনতলা চৌমুহনী ও রসুলপুর সিলিকা বালু মহাল দুটি ছয় কোটি ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৩ টাকা রাজস্ব দিয়ে ইজারা নেন স্থানীয় খাঁন কনস্ট্রাকশন ও আলফাজ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ইজারার মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালের ১৫মে পর্যন্ত।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজেন ব্যানার্জি বলেন, চোরাইভাবে মাটি-বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) দের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। যদি কোন অবৈধ বালু, মাটি ব্যাবসায়ী বা সরবরাহকারি পাওয়া যায় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈধ বালু মহালের ইজারাদার খাঁন কনস্ট্রকশনের স্বত্তাধিকারী ও জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ খাঁন বলেন, সরকারি কোষাগারে চার কোটি তিন লক্ষ ৩১ হাজার ৩৪৩ টাকা রাজস্ব দিয়ে তিনি ২ বছরের জন্য রসুলপুর বালু মহালটি ইজারা নেন। এখন পর্যন্ত ইজারা মূল্যের ২০ শতাংশ টাকাও পাননি। এ কারণে বিপুল পরিমান অর্থ লোকসানের মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন। রাজস্ব না দিয়ে যে যার মতো করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করায় বৈধ ব্যবসায়ীদের বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ