ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

২ ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শামসুদ্দীন

প্রকাশনার সময়: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:০৫

মোহাম্মদ শামসুদ্দীন। তাঁর বয়স ৬০ বছর। সারাজীবন সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের ঘানি টেনে বড় করেছেন ৩ ছেলে ও এক মেয়ে কে। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে না পারলেও ঠিক সময়ে সংসারের হাল ধরে তার দুই ছেলে মো. সুমন ও শেখ ফরিদ। ভালোই চলছিলো তাদের সংসার সুমন ও শেখ ফরিদ দুজন সম্পর্কে ভাই হলেও তারা ছিলেন বন্ধুসুলভ। তাই তাদের পিতা মোহাম্মদ শামসুদ্দীন দুই ছেলের মুসলিম রীতিমতে খৎনা ও বিয়ের আয়োজনটা সেরেছেন একসাথে। কে জানতো, মৃত্যুর দিনটা ও একসাথে হবে তাদের।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় কাভার্ডভ্যান চাপায় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান মো. সুমন (২৫) ও শেখ ফরিদ (২৭) এই দুই সহোদরসহ ৪ জন। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের গড়িয়াইশ গ্রামে একসাথে জানাজার নামাজ শেষে এক সাথে বড় ভাই শেখ ফরিদের পাশেই সুমনকে দাফন করা হয়।

দুই ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা শামসুদ্দীন। তিনি বলেন, ছোট থেকে আমার এই দুই ছেলে খুবই আন্তরিক ছিল। সম্পর্কে তারা ছোট ভাই বড় হলেও তারা ছিল বন্ধুর মতো। খাওয়া-দাওয়া চলাফেরা সবই এক সাথে তাদের। একজনকে ছাড়া একজন খেতেও বসতো না। তাই তাদের খৎনা ও বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছিলাম একসাথে। কে জানতো তাদের মৃত্যুর দিনও এক সাথে হবে। আমার অভাবের সংসার ছিল, তাই তাদের বেশি লেখাপড়া করাতে পারেনি। অল্প বয়সে তারা সংসারের হাল ধরেছে। এখন আমার সাজানো-গোছানো সংসার তছনছ হয়ে গেল।

তিনি বলেন, এভাবে আমার বুক খালি করে দুই ছেলে চলে যাবে, কখনো চিন্তা করতে পারিনি। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। ছোট ছোট নাতি-নাতিনদের কি হবে? আপনারা আমার ছেলেদের মাফ করে দিবেন। জানাজায় আগত মুসল্লিরা কাঁদতে থাকেন তার অশ্রুসিক্ত চোখে এ কথাগুলো শুনে।

এলাকার বাসিন্দা নুরুল মোস্তফা বলেন, সুমন ও ফরিদ দুই ভাই একসাথে চলাচল করতো। বাইরে থেকে কেউ এলে বুঝতে পারতেন না, তারা আপন ভাই। কারণ, তাদের চলাফেরা একদম বন্ধুসুলভ চলাফেরা ছিল।

সুমনের নিশাদ নামে ৭ বছরের এক ছেলে ও ৪ বছরের মারিয়া নামে একটি মেয়ে রয়েছে। শেখ ফরিদের রাহিম নামে ৪ বছরের এক ছেলে ও তাসফিয়া নামে এক মেয়ে রয়েছে। সুমনের নিশাদ নামে ৭ বছরের এক ছেলে ও ৪ বছরের মারিয়া নামে একটি মেয়ে রয়েছে।

দুই ছেলে কে হারিয়ে বারবার অজ্ঞান হতে দেখা গেছে তাদের মা নুরজাহান বেগমকে। উপস্থিত আত্মীয় স্বজনরা তাকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের সোনা পাহাড় ফিলিংস্টেশন থেকে বের হওয়ার পর একটি কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় দুই সহোদরসহ একই ৪ এলাকার চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আরও ৬ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ