দেশের অন্যতম সবজি উৎপাদনকারী এলাকা বলে খ্যাত ঈশ্বরদীতে শুরু হয়েছে আগাম সবজি চাষ। শীতকালীন সবজি হিসেবে এরই মধ্যে মুলা, গাজর, ওলকপি, লাউ, ধনিয়াপাতা, লাল শাক, পালং শাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু হয়েছে। যখন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক তখন বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেল ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত চাষিরা। মূল্যবৃদ্ধির খড়গ মাথায় নিয়ে এরই মধ্যে শিম, মুলা, গাজর ও ফুলকপির পাশাপাশি ওলকপি, ঢ্যাঁড়স, বাঁধাকপি, বেগুন, ধনিয়া পাতা, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। চাষিদের অভিযোগে জানা গেছে, সবজি চাষে বিঘা প্রতি খরচ বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ঈশ্বরদীতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২০ হাজার ৩৯০ হেক্টর। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়। এখানে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় শিম। প্রায় ১,৩০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এছাড়াও ফুলকপি ৯০০ হেক্টর, মুলা ৯৪৫ হেক্টর, গাজর ৮৯০ হেক্টর, বেগুন ৪০০ হেক্টর, বাঁধাকপি ২১৫ হেক্টর ও ৩৫০ হেক্টর জমিতে ঢেঁড়শের আবাদ হয়।
ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শুধু সবজির আবাদ। চাষিরা সবজির চারা রোপণ, পরিচর্যা ও সেচের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকরা জানান, বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সবজির আবাদে। অনাবৃষ্টিতে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনে সবজি ক্ষেত সেচ দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে এবারে সবজি আবাদে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখা সবজি চাষিদের কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
ভাড়ইমারী গ্রামের বাদশা মিঞা জানান, গত বছর এক বিঘা জমিতে গাজর চাষে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার, এবারে ৯০ হাজার টাকা হবে। এক কেজি গাজরের বীজের দাম গত বছর ছিল ১৬ হাজার ৫০০ টাকা, এবারে ২১ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছর ইউরিয়া সার ছিল ৮০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)। এবার সরকারি দাম ১১০০ টাকা হলেও ডিলাররা দাম নিচ্ছেন ১৩০০ টাকা, টিএসপি গত বছর ৯০০ টাকা বস্তা থাকলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা, এমওপি সার ১০০০ টাকা, ডিএপি ১২০০ টাকা বস্তা।
তিনি আরও বলেন, ডিলাররা সারের সংকট দেখিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের সার কিনতে বাধ্য করছেন। অনাবৃষ্টির কারণে এবারে সেচের জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। উৎপাদিত গাজর বিক্রি করে সে খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সার নিয়ে ডিলাররা লুকোচুরি শুরু করেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিলাররা সার দিচ্ছে না। তারা বস্তা প্রতি দুই থেকে ৩০০ টাকা বেশি নিচ্ছে। ডিলারদের কারসাজি দেখার কেউ নেই।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, সার, কীটনাশক, বীজ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায় সবজি উৎপাদনে খরচ বাড়বে। উৎপাদিত সবজির বাজারদর না বাড়ালে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে তারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাবে। এসময় কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর নির্ধারণের জন্যও দাবি জানান তিনি।
দাশুড়িয়ার বিএসআইসি অনুমোদিত সার ডিলার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যেই এখানে সার বিক্রি হয়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সবসময়ই সার বিক্রি তদারকি করেন। বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ডিলারদের সার বিক্রি সবসময় মনিটরিং করছে কৃষি অফিস। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনিয়ম করার চেষ্টা করবে। সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করতে হবে এবং কৃষকদের সচেতন হতে হবে।’
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ