সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রাম পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। গ্রাম পর্যায়ের এমন একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হলো- শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। যা জেলার নকলা উপজেলাধীন গনপদ্দী ইউনিয়নে অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানটি রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ও দক্ষ-প্রশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সর্বমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

চরম জনবল সংকট, অবকাঠামো, আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটের মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক সব কাজের প্রক্রিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন, অধিবাসীদের অধিকতর কল্যাণ ও নিরাপদ অভিবাসনে ভিশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য বিশ্ব শ্রমবাজারে চাহিদার ভিত্তিতে যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, সুষ্ঠু ও সুসংহত অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং কর্মীদের সুরক্ষা অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করা।

বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়তে শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখান থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে চাকুরির সুযোগ পাচ্ছে বেকার যুবক-যুবতীরা। স্বল্প শিক্ষিত কিংবা শিক্ষিত বেকাররা সমাজের বোঝা নয়, তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলে মানবসম্পদে পরিণত করাই প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মির্জা ফিরোজ হাসান।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফলে একদিকে যেমন দক্ষ কর্মী রপ্তানিতে দেশের সুনাম যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ।

তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষিত মানুষকে বিদেশগামী করতে ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে এই টিটিসি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। এই টিটিসির কার্যকরী ভূমিকার ফলে দেশের প্রশিক্ষিত নাগরিকগণ বিদেশে ভালো কাজের নিশ্চিয়তা পেয়েছেন। এতে করে কমছে বেকারত্ব, তাদের পরিবারে আসছে স্বচ্ছলতা। এছাড়া আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য, স্বস্তিতে বিদেশে গমণ করতে পারছেন গ্রামের প্রশিক্ষিত অগণিত মানুষ।

সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক কারিগরি প্রশিক্ষণ দুভাগে বিভক্তে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসএসসি ভোকেশনালের আওতায় ‘সিভিল কন্সট্রাকশন’ ও ‘জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়াকর্স’ এ দুই ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বর্তমান সেশনে দুই ট্রেডে ৯১ জন শিক্ষার্থী আছে।

অপরদিকে টেকনিক্যাল ট্রেনিং কোর্সে এবং জেনারেল ট্রেনিং কোর্সের আওতায় (নিয়মিত) কম্পিউটার অপারেশন, ওয়েলডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, মেশিন টুলস অপারেশন, সুইং মেশিন অপারেশন; সেইপ (SEIP) প্রকল্পের আওতায় ৪ মাসের ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্স প্রশিক্ষণ এবং দেশ-বিদেশ প্রকল্পের আওতায় ৩ মাসের ড্রাইভিং অটোমেকানিক্স মটোরড্রাইভিং কোর্সে দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা বেকার যুবক ও যুবনারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া আরপিএল-এর আওতায় আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান, মেসন, ইলেক্ট্রিক্যাল হাউজ ওয়্যারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিন অপারেশন/গার্মেন্টস, মেশিন টুলস অপারেশন, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন করানো হচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে গমণ করতে আগ্রহীদের প্রাক বহির্গমন প্রশিক্ষণ ও হাউজ কিপিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে।

টিটিসি সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-এর ডরমেটরি ভবন দূর-দূরান্তের প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে। অত্যাধুনিক কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সমৃদ্ধ ল্যাব এবং ইন্ডস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিনের গার্মেন্টস ওয়ার্কশপে সকাল-বিকেল চলছে প্রশিক্ষণ। অত্যাধুনিক আর্ক ওয়েল্ডিং মেশিনসহ বুথ সমৃদ্ধ ওয়ার্কশপেও রয়েছে প্রশিক্ষণার্থীদের ভিড়। ড্রাইভিং ও গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ শিখতে ব্যস্ত অঅগণিত বেকার যুবক ও যুবনারী।

অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মির্জা ফিরোজ হাসান জানান, শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)-তে এসএসসি ভোকেশনালের আওতায় বর্তমান সেশনে “সিভিল কন্সট্রাকশন” ও “জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়াকর্স” এ দুই ট্রেডে ৯১ জন শিক্ষার্থী আছে। এছাড়া ৩৬০ ঘন্টা মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সে ৩০১ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত ১ হাজার ৬৫১ জন প্রাক বহির্গমন প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। বিবিধ ফ্যাসিলিটি ও সক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চমানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিনিধিত্ব করবে বলে তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।

দেশীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে, বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে, প্রশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তুলতে ও বেকারত্ব কমাতে শেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগীসহ সব পেশা-শ্রেণির মানুষ।