ময়মনসিংহের ত্রিশালে সারের দোকানে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা থাকার পরেও ডিলাররা তা মানছেন না। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সার। নির্ধারিত মূল্য দোকানে টানিয়ে রাখা শর্তেও তা অমান্য করে কৃষকদের কাছে ডিলাররা চড়া দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। তবে ডিলাররা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সারের দাম কিছু বেশিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমন ধান চাষে সাধারণ কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
এবার অনাবৃষ্টিতে তীব্র খড়ায় সেচ দেরিতে চাষাবাদ শুরু করতে হয় উপজেলার কৃষকদের। দফায় দফায় কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি, জমি তৈরি করে ধান রোপণে ব্যস্ত চাষিদের চিন্তার ভাজ বাড়িয়েছে।
এর মধ্যেই বাড়তি দুশ্চিন্তায় সারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। সরকার ইউরিয়া সারের দর ১৬ টাকা কেজি থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা কেজিতে বিক্রির ঘোষণা দেয়। তবে প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগ, সারের সরবরাহ থাকলেও ডিলারের কারসাজিতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে।
ত্রিশাল কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ও একটি পৌরসভায় বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছে ১৩ জন ও বিএডিসি সার ডিলার রয়েছে ৬ জন। তাদের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের সার সরবরাহ করা হয়।
উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের কৃষক রহিম মিয়া বলেন, এবার সময়মতো পানি না পাওয়ায় দেরিতে ধান লাগিয়েছি। পানি সেচ দিয়ে দেওয়ার ফলে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এখন সারের দামও অনেক বেশি। আমরা কোথায় যাব। এত টাকা খরচ করে ধানের ভালো দাম পাওয়া যায় না। ধান চাষ না করলে না খেয়ে মরব। সরকারি মূল্যের থেকে ডিলাররা সারের দাম বেশি নিচ্ছে।
কয়েকজন ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষক অভিযোগ করেন, এমনিতেই বৃষ্টি না থাকার কারণে আমরা ছিলাম বিপাকে তার ওপর এখন ডিলাররা সার ঘরে রেখেও বলে সার নেই। তখন নিরূপায় হয়ে আমাদের প্রয়োজনেই বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। আমরা ডিলারকে কিছু বললে সে উল্টো বলে কম দামে দিতে পারব না, পরিবহন খরচ বেশি। এ দাম হলে নিতে পারেন। ক্ষেতে তো সার দিতে হবে, তাই বাধ্য হয়েই নিচ্ছি।
উপজেলার সার ডিলাররা জানান, ত্রিশালে সারের কোনো সংকট নেই। সারের দাম সরকার ১৬ টাকা থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে। আমরা সরকারি মূল্য তালিকা টানিয়ে বিক্রি করছি। তবে জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় ক্যারিং খরচ বেশি। তাই আমাদের প্রতি বস্তায় ৭০-৮০ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। আমরা যাব কোথায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান বলেন, এ উপজেলায় আমন ধান চাষের টার্গেট রয়েছে ১৯ হাজার ২ শত ৩০ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হচ্ছে ১৮ হাজার ২ শত ৫০ হেক্টর জমি। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রিশালে সারের সংকট নেই। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও যাতায়াত ভাড়া বেশি হওয়ায় সার ডিলাররা হয়তো কিছু টাকা বেশি রাখে। আমরা কৃষকের কথা চিন্তা করে সবসময় বাজার তদারকি করছি। অনিয়মের কারণে অভিযান চালিয়ে তিন সার ডিলারকে জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, প্রশাসন যদি ডিলারদের গুদামে সারের মজুদ তালিকা যাচাই-বাছাই করে তদারকি করেন, তাহলে সাধারণ কৃষকরা চড়া দাম থেকে রক্ষা পাবে। প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবে।
নয়া শতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ