চলনবিলের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান কয়েকটি জলজ উদ্ভিদের মধ্যে শাপলা ও শালুক অন্যতম। সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ পুরো চলনবিলের বুকজুড়ে এক সময় শাপলা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। জলের ওপরে ফুটে থাকা শাপলা ফুলের দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য সত্যিই মানুষকে মুগ্ধ করতো। সবার প্রিয় সাদামাটা এ ফুল শুধু চলনবিলেই নয়, যে কোনো ডোবা-নালায় জন্ম নিয়ে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করতো।
কিন্তু আফসোস! প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে মাঠে পানি নাই তাই শাপলা ফুলের সেই সমারোহও আর নাই। দিনে দিনে শাপলা-শালুক যেন একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ থেকে কিছু বছর আগেও চলনবিলের বুকজুড়ে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। সে সময় শরৎকালে চলনবিলের প্রকৃতি অন্যরকম সাজে সেজে উঠতো। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেত চারদিকে ফুটে থাকা সড়কের ধার দিয়ে কাশফুল ও শাপলা ফুলের সমারোহ। মনে হতো এ যেন শাপলা ফুলের জগৎ। শাপলা সাধারণত লাল ও সাদা এই দুই ধরনের। এখন আর এ দৃশ্য চোখে পরেনা। এর পেছনের কারণ প্রাকৃতিক জলবায়ুর পরিবর্তন আর এই জলবায়ুর পরিবর্তন মনুষ্যসৃষ্ট।
শাপলা শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয়; এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। তাছাড়া এ ফুলের গাছ, গোড়া ও মাথা কিছুই ফেলে দেয়ার নয়। শাপলার নরম ডাটা, মাথা ও গোড়ায় জন্মানো ড্যাপ এবং শালুক সবই মুখরোচক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য। শাপলা গাছ বা ডাটা পানির গভীরতায় ৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। নরম কচি আর মচমচে এ ডাটা, লবণ ও তেঁতুল মাখিয়ে মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়ার মজাই আলাদা। এ ছাড়া মাছ, মাংস রান্নার উৎকৃষ্ট তরকারি হিসেবে এর ডাটা বেশ জনপ্রিয়।
অন্যদিকে শালুক আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। আগের দিনে শরৎকালে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলনবিলজুড়ে শালুক তোলার ধুম পড়ে যেত। শালুক পোড়া গন্ধ এখনো প্রবীণদের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে আগের মতো সঠিক সময়ে বন্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া আবাদি জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা শালুক নষ্ট হচ্ছে। ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্ম নিচ্ছে না। এখন শরৎকাল শেষ হলেও চলনবিলসহ দেশের কোথাও সেই আগের মতো শাপলা-শালুকের দেখা নেই। এ জলজ উদ্ভিদ আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে, শাপলার অস্তিত্ব কতটুকু টিকে থাকবে সেটাই এখন ভাবার বিষয়। এ অবস্থায় শাপলা ও শালুক'কে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে, পরিবেশবান্ধব সংগঠনগুলোর হস্তক্ষেপ, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ