জেলার করিমগঞ্জের পান চাষিদের দুর্দিন যাচ্ছে, ক্রমাগত লোকসানের মুখে পান চাষিরা। তিন বছর ধরে পানের দাম অপেক্ষাকৃত কম। তিন বছর আগে ২৪০০ পানের পাতা (এক কুড়ি) যেখানে প্রকারভেদে ৬ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এখন পানচাষিরা বিক্রি করছেন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর যেটা ৩ হাজার ৬০০ টাকা ছিল, তা বিক্রি করছেন ৮ শত টাকা থেকে ৯ শত টাকা। ছোট আকারের পান যেখানে আগে দাম ছিল ৯ শত টাকা, সেখানে বর্তমানে বিক্রি করছেন ২ শত টাকা থেকে আড়াইশত টাকা।
লোকসানের মুখে পড়ায় ইতোমধ্যেই জাফরাবাদ ইউনিয়নের সুবন্ধী গ্রামের পান চাষি মেনু মিয়া, দীন ইসলাম ভুঁঞাসহ অনেকে পানের বরজ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। একই গ্রামের কুদ্দুস ভুঁঞা, দীন ইসলাম ও মো. আসাদুল্লাহ পান বিক্রি করে ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছেন। যে কোনো মুহূর্তে পানের বরজ ভেঙে ফেলে অন্য চাষে মনোযোগী হতে পারেন বলে তারা জানান।
করিমগঞ্জে মূলত পানচাষিরা গয়াসুর, লালডিঙ্গি ও পারই জাতের পান চাষ করে থাকেন। একবার বরজ করা হলে যত্নভেদে দশবছর পর্যন্ত টিকে থাকে। বর্ষা মৌসুমে পানের উৎপাদন বেশি হয়। আর শীতকালে পানের কুঁড়ি ছাড়ে কম, তাই পান উৎপাদনও কম হয়। করিমগঞ্জের পান চাষিরা মূলত কিশোরগঞ্জ সদরে পুরানা থানা বাজারে তাদের উৎপাদিত পানগুলো বিক্রি করেন।
উপজেলার সুবন্ধী গ্রামের মো. আসাদুল্লাহ বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পান চাষ করেছি। এ দুই বিঘা জমি তৈরি করতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে পানের দর কম থাকায় লোকসানের মুখে আছি। আগে দুই বিঘা জমিতে খরচ বাদে আয় করা যেত দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা আর এখন প্রচুর ঘাটতি আছে। একদিকে পানের দর কম, অপরদিকে পানের জন্য জৈবসার খৈলের দাম দুই গুন বেড়ে গেছে এবং বালাইনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ বাড়লেও পানের দাম বাড়েনি। এভাবে চলতে থাকলে পানের বরজ ভাঙা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
ইদানিং রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পানে কিশোরগঞ্জ বাজার সয়লাব থাকার কারণে পানের ঘাটতি নেই, সেই কারণে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পান বাজারে সরবরাহ থাকায় পানের দাম কম বলে অনেকে মনে করেন।
করিমগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় পানের পচন রোগ দেখা দেওয়ায় পান চাষিরা বেশি বেশি পান তুলছেন। এতে করে বাজারে সরবরাহ বেশি, তাই পানের দাম বর্তমানে কম। এ অবস্থা সাময়িক। বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানচাষিরা আবার লাভের মুখ দেখতে পারবেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ