দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে উন্মুক্ত হচ্ছে সুন্দরবনের দ্বার। বৃহস্পতিবার থেকে উঠে যাচ্ছে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা। আজ থেকে পুনরায় পর্যটকরা যেতে পারবেন বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভে। বনের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও যাবেন তাদের জীবিকার সন্ধানে। তবে অভয়ারণ্য এলাকায় প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আগের মতোই বহাল থাকবে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা উপকূলে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বনজীবী ও পর্যটন নির্ভর মানুষরা। ইতোমধ্যে নৌকা-ট্রলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অভাব অনটনে পড়ে থাকা বনজীবীরা কষ্ট ভুলে আবারও নতুন উদ্যমে ফিরতে চান সুন্দরবনে।
সুন্দরবন উপকূলের মানুষের মধ্যে চাপা আনন্দ বিরাজ করছে। বনজীবীদের শেষ মুহূর্তের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনেকেই ব্যস্ত সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পত্র নেওয়ার জন্য। পশ্চিম সুন্দরবনের বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস গুলোতে সকাল থেকে অনুমতি পত্র গ্রহণে জেলে ও ট্রলার মালিকদের লম্বা লাইন দেখা যায়।
গাবুরার চাঁদনীমুখা গ্রামের ইউনুস বলেন, দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকার কারণে খেয়ে না খেয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছি। সুন্দরবন খুলে দিয়েছে এখন অভাব অনটন কিছুটা হলেও কমবে।
বনজীবী খানজাহান আলী বলেন, সবার আগে পাশ করতে এসেছি। দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ ছিল। পারমিশন নিয়ে আগে যেতে পারলে বেশি মাছ পাব এজন্য আগে এসেছি।
অন্যদিকে পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ইতোমধ্যে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা নতুন নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ট্রলার গুলোকে নতুন নতুন রঙে সাজিয়ে তুলেছেন অনেকেই। দীর্ঘ করোনা কালীন পরিস্থিতি ও বন্ধের সময় পেরিয়ে পর্যটকদের সুন্দরবন আকৃষ্ট করার জন্যই এমন সুসজ্জজ্জা বলে জানাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।
মান্দারবাড়িয়া এক্সপ্রেসের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার সময় বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারেনি কোনো পর্যটক। করোনা পরিস্থিতি শিথিল হলেও বন বিভাগের টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞায় এই শিল্পটা ধ্বংসের মুখে। আমরা এই শিল্পটাকে উজ্জীবিত করতে চাই। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে একেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য। এই সুবিধাটাকে আমরা এই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।
মুন্সীগঞ্জ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান আনিস বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলে বাওয়ালী পর্যটক কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেনি। জেলে বাওয়ালীদের সাথে ট্রলার মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে যুক্ত শ্রমিকদেরও দুর্দিনে কেটেছে এসময়। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে শতাধিক পর্যটন ট্রলার আছে।
পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয় করতে ইতোমধ্যে বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ অফিসের সন্নিকটের অফিস কলাগাছিয়াকে সাজানো হয়েছে নানান রুপে। ইতিমধ্যে করমজল থেকে সংযুক্ত হয়েছে তিনটি কুমির। সংস্কার করা হয়েছে ফুট-ট্রেলসহ পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর রাস্তা। এছাড়া আরো কিছু সংযোজন করার কথা ও বলছেন সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ ও বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) আছে ২ হাজার ৯০০টি যার মধ্যে নবায়ন হয়েছে ২৭৯৬টি। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ১০৪টি। মধু মোম সংগ্রহের বিএলসি ৩০০, গোলপাতা ২৮ ও লবণপানির রয়েছে ১০টি বিএলসি।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় নিবন্ধিত ২৩ হাজার জেলে-বাওয়ালী রয়েছেন। এদের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলে রয়েছে ৭৯৫জন। এছাড়া শ্যামনগর উপকূলের বেশিরভাগ মানুষ সুন্দরবনের সাথে যুক্ত।
গত ১লা জুন থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে সুন্দরবনে সবার জন্য প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রেখেছিল বন মন্ত্রণালয়।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ