ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোহিঙ্গা গণহত্যার ৫ বছর, ফিরতে চায় বাপ-দাদার ভিটে মাটিতে

মোনাজাতে কান্নার রোল
প্রকাশনার সময়: ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৯

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৫ বছর আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট)। দিনটিকে রোহিঙ্গারা কালো দিবস আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।

সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন পালনক রেছেন রোহিঙ্গারা।

সরেজমিনে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেখা যায়, ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আশপাশের ক্যাম্প থেকে সকাল থেকে লোকজন খেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। ক্যাম্পেইন সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তোলেন।

রোহিঙ্গা ঢলের ৫ বছরে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার শোয়াইব, মাস্টার নুরুল আমিন, মাস্টার জুবায়ের, মোহাম্মদ ইউসুফ, মাস্টার কামাল প্রমুখ।

সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আজকে ‘গণহত্যা’ দিবসে পালন করেছি। কারণ এইদিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার আমাদের ‘গণহত্যা’ করেছে। আমরা রিফুজি হয়ে থাকত চাই না। এখন সোনালি আরকানে ফিরতে চাই। জান্তা সরকার আমাদের নিধন করতে ৫ বার বিতাড়িত করেছে মিয়ানমার থেকে। প্রতিবারই মানবিক বাংলাদেশ আামদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ।’

ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, ‘ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ‘রোহিঙ্গাদের জেনোসাইড রিমেম্বারড’ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ক্যাম্পে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

জানা গেছে, রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’র পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কক্সবাজারের আশ্রিত ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১২, ১৩, ৮, ১৯, ২০, নম্বর ক্যাম্পসহ ২২ জায়গায় (বৃহস্পতিবার) একসঙ্গে পৃথকভাবে দিবসটি পালন করেন রোহিঙ্গারা। তারা সেখানে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি, সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, সেফজোন, নিজস্ব সহায়-সম্বল ফেরত, প্রত্যাবাসনের সময় বেধে দেওয়া, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, এক বারে গ্রামের সব মানুষকে প্রত্যাবাসন করা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন না করা। এছাড়া প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা।

মিয়ানমারের পতাকা হাতে ভিটে মাটিতে ফিরতে চায় শিশু ইউসুফ

টেকনাফ প্রতিনিধি : আমরা রোহিঙ্গা, আমাদের দেশ মিয়ানমার। এসব লেখা সম্বলিত প্লে কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ ক’জন রোহিঙ্গা শিশু। তাদের চোখে মুখে স্বদেশ ফেরার তাড়া। কিন্তু কীভাবে তারা ফিরে যাবে নিজ দেশে- এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের মনে।

মোহাম্মদ ইউছুফ। দশ বছরের এই শিশু নিজ দেশের পতাকা হাতে এসেছিলেন সমাবেশে। তারও একই দাবি। বাপদাদার ভিটে মাটিতে ফেরত যেতে চায় সে।

জাফর আলমের বয়স পঞ্চশের কোটায়। দু’চোখ বেড়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। এ জল দেশ প্রেমের। উখিয়ার লম্বাশিয়াক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশে মোনাজাত কালে জাফর আলমের মতো অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

উপরের সবকটি ঘটনায় ২৫ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সকালের। এই দিনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পালন করেছে রোহিঙ্গাগণহত্যা দিবস। যদিওবা দিবসটি নমকরণ করেছে খোদ রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে উখিয়া এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সমাবেশ করেছেরোহিঙ্গারা।

বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়া এবং টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্পে পৃথক পৃথক সমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গাদেরবিভিন্ন সংগঠন। এসময় তারা মিয়ানমারের ফিরে যাওয়ার দাবি জানান।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ময়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়নের এখনও বিচার পায়নি তারা। আন্তাজাতিকআদালতে গণহত্যার বিচারের দাবিসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান রোহিঙ্গারা। নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতেও সোচ্ছার ছিলেন সমাবেশে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার কামাল হোসেন জানান, ৫ বছর হয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায়নি মিয়ানমার। শিগগিরই তারা নিজ দেশে ফিরতে চায়। সে জন্য মিয়ানমারে প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিথং ও রাসেথং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। ওইদিনটি স্মরণে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ‘রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে’ পালন করে আসছে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ