বৈরী আবহাওয়ায় নিখোঁজ হওয়া জেলেদের মধ্যে থেকে ৬৫ জন ও ৩টি ফিশিং বোট উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। রোববার (২১ আগস্ট) বিকেল পাঁচটায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহাম্মদ মোহসিন হোসেন স্যারের নির্দেশনায় সুন্দরবনে স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের কার্যক্রম পূর্ব থেকে চলমান। ২০ আগস্ট স্মার্ট পেট্রোলিং টিম-২ এর টিম লিডার মো. স্বাদ আল জামি-এর নেতৃত্বে আনুমানিক সকাল ১০টায় মালঞ্চ নদী হয়ে খোবরাখালীর ভারানী থেকে মাহামুদা নদীর যাওয়ার পথে ট্রলার দেখতে পায়। তাদের কাছাকাছি গেলে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারা জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে তারা ভাসতে ভাসতে এখানে চলে এসেছে। পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে হলদেবুনিয়া অফিসে এবং পরবর্তীতে রেঞ্জ অফিসে পাঠানো হয়।
জেলেদের ভাষ্যমতে, ৫টি ফিশিং বোটের মধ্যে চোখের সামনে ২টা বোট প্রবলঝড়ে ডুবে যায়। বোটে থাকা লোকগুলো ঝড়ে কবলে পড়ে চোখের সামনে টোকা ছেলার মত ভাসতে থাকে প্রাণ বাঁচানোর, তাদেরকে উদ্ধার করতে পারেনি এমনটাই বলছিলেন এফবি লাকির মাঝি বেলাল।
এফবি লাকি থেকে উদ্ধারকৃত ১৫ জন জেলেরা হলেন- বেলাল, নিজাম, আবুল কালাম, ফারুক, শামীম, নাসির, কবির খলিফা, মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান, জলিল, আলমগীর, সিফাত খলিফা, সবুজ পঞ্চাত, কবির মোহাম্মদ ও মোহাম্মদ আলী।
এফবি মায়ের দোয়া থেকে উদ্ধারকৃত ১৫ জন জেলেরা হলেন- জাফর হালদার, নাঈম শিকদার, মো. আলম নুর ইসলাম, মাহবুব হাওলাদার, মো. দিলু হাওলাদার, বাদশা, জসিম হাওলাদার, মো. ইমরান, জসিম, ইলিয়াস, কামাল বেপারী, শাহাজাহান, আনসার হাওলাদার ও জহির খাঁ।
এফবি ভাই ভাই ফিশিং বোট থেকে ১১ জন উদ্ধারকৃত জেলেরা হলেন- হাবিবুর রহমান, সাব্বির, আল আমিন, ইয়াসিন, নাসির, মিরাজ, হানিফ, কামাল, ইমদাদুল, জাকির ও রায়হান উদ্ধার হয়। জেলেরা পাথরঘাটা ও ভোলা জেলার বলে জানা গেছে।
ডুবে যাওয়া এফবি ভাই ভাই ও এফবি আল্লাহর দান ফিশিং বোটের ডুবে যাওয়া জেলেদের উদ্ধার করে ভারতীয় জেলেরা। উদ্ধার হওয়া জেলেদের আকুতিতে তাদেরকে পৌঁছে দেওয়া হয় হলদেবুনিয়া অফিসে। পরবর্তীতে উদ্ধার হওয়া এফবি ভাই ভাই এর জেলেরা হলেন, লোকমান হোসেন, ইব্রাহীম, আলাউদ্দিন, জমাদ্দার, রামেন, ফুল মিয়া, শাহ আলম, আব্দুল আজিজ, সিদ্দিক, শহিদুল, জাহাঙ্গীর, হেলাল ও শহিদুল।
ডুবে যাওয়া অন্য বোর্ড এফবি আল্লাহর দান থেকে উদ্ধার হওয়ার জেলেরা হলেন- নাসির উদ্দিন, আল আমিন, জালাল, হানিফ, বারিক, আবুল হাওলাদার, মিরাজ মোল্লা, কালাম খান, মানিক হাওলাদার, জুলি আকন ও জালাল। এফবি মায়ের দোয়া বোটের মাঝি জাফর হালদার বলেন, আমাদের এলাকার আরও অন্তত ১৯ জেলে নিখোঁজ আছে। তারা হলেন- আব্দুল জলিল, নাইম, ছগির, বিল্লাল, বাবলু আকর, জয়নাল, মোহাম্মদ আব্দুল করিম, হেলাল, আসাদ, স্বপন, ফরহাদ, বশির, সজিব, আব্দুল কাদের, আবুল, শুকুর, সাব্বির ও রফিক।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে বেশ কিছু ফিশিং বোট নিখোঁজ হয়, তার মধ্যে ৩টি বোর্ড ও ৬৫ জন জেলে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম-২ ও ভারতীয় জেলেদের সহযোগিতায় হলদেবুনিয়া অফিস উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
উদ্ধার পরবর্তী সব জেলেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও প্রয়োজনীয় খাবারের সহায়তা দেয়া হয়। নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি আপনারা যদি খোঁজ পান, তাহলে আমাদের জানাবেন। আমাদের উদ্ধার অভিযানিক দল সাথে সাথে সেখানে পৌঁছে যাব। উদ্ধার পরবর্তী জেলেদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জেলেরা বন বিভাগ সব সদস্য ও পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক একেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী এই ঋণ কখনো ভুলবে না বলে জানান। এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। এসিএফ জেলেদের বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। পরে উদ্ধার হওয়া তিনটি বোটে সব জেলেদের একত্রিত করে, তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করিয়ে দেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ