বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সকাল থেকে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি হচ্ছে উপকূলজুড়ে। স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লবণপানি লোকালয়ে প্রবেশের ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কালিন্দী নদী সংলগ্ন বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকা কৈখালী ইউনিয়নের বিজেপি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে উপচে লবণপানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। একই চিত্র উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম জানান, দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার বেশ কিছু জায়গা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে লোকালয়ে পানি প্রবেশ রোধে বেশ কিছু জায়গায় কাজ শুরু করেছে। তবে পূর্ণিমার জোয়ার যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, তাহলে এই জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ টিকে থাকবে না।
বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে অস্বাভাবিক হারে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত কিছুদিন আগে ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি বেড়িবাঁধ আকস্মিকভাবে ভেঙে যায়। সেই ক্ষতি এখনো এলাকার মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইউনিয়নের তিনটি পয়েন্ট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া দাতিনাখালি, ভামিয়া কলবাড়ি, চুনাসহ বেশ কিছু এলাকা হুমকিরমুখে আছে। অতিরিক্ত জোয়ার হলে এলাকাগুলো ঝুঁকিতে থাকবে। বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে প্রতিরক্ষা আইল দিয়ে নিজেদের এলাকার প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূল এলাকার মানুষ প্রায় সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কারণে তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়। উপকূলীয় এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ থাকার সত্ত্বেও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ গুলোর ঠিকঠাকভাবে কাজ হয় না। যতটুকু কাজ হয়, ততটুকুই চরম দুর্নীতি হয়। সুপার সাইক্লোন ইয়াসের পরে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে কাজ করলেও শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে সংশিষ্ট ঠিকাদার।ইয়াসের পরে উপকূলীয় এলাকায় ১৪৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে। ইয়াসের আগে বুলবুল ঝড়ের পরে ৪৩টা ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ছিলো। ইয়াসের পরে ১৪টা পয়েন্টের কাজ হলেও এখনো ভালোভাবে কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। যদি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো কাজ না করা যায়, তাহলে অতিরিক্ত নদীর জোয়ারের পানিতে উপকূলের মানুষ তাদের সর্বস্ব হারাবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ ৩টি, বুড়িগোয়ালীনি ৫, গাবুরায় ৭ টি,পদ্মপকুর ৮টি, কাশিমাড়ী ১টি আটুলিয়ায় ১টি পয়েন্টগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম মৃধা বলেন, মুন্সীগঞ্জে ৩ পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোডের্র বলার পরেও তারা কাজ করছে না।
অতিরিক্ত জোয়ার আর বৃষ্টির কারণে নাজুক বাঁধ ভাঙার সম্ভবনা আছে। জেলা পরিষদের সদস্য ডালিম ঘরামী বলেন, উপকূলীয় এলাকার নদী বেষ্টিত এলাকা। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সম্ম্মুখিন হতে হয়। যে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা ও সাজ্জাদুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র মজুদ করা হয়েছে। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না। বেশি সমস্যাযুক্ত স্থানগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি এবং আমাদের প্রত্যেকটা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ চলমান আছে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ