জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহত্তম মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ধানের দাম ক্রমেই বাড়ছে। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দামও। তিন দিনের ব্যবধানে ধানের দাম মণ প্রতি বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে চালের দাম প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ১৫০-২০০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম না কমলে ধান-চালের বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মোকামে ধান নিয়ে আসা নৌকার ভাড়া বেড়েছে। যার কারণে প্রতি মণ ধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। এছাড়া মোকাম থেকে চালকল পর্যন্ত ধান পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে ধান থেকে চাল তৈরিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আর সেই খরচ সমন্বয় করতে গিয়েই বাড়ানো হয়েছে চালের দাম।
বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকামে বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা (৫০কেজি) পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকা এবং বিআর-২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকায়। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে বিআর-২৮ চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৪৫০ টাকা ও বিআর-২৯ চাল বিক্রি হয়েছিল ২৪০০ টাকা বস্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হওয়ার দিন থেকেই ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন আশুগঞ্জের ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা। ফলে পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় টানা ৩ দিন মোকামে ধান বেচা-কেনা বন্ধ থাকে। এতে ধান সংকটে পড়ে আশুগঞ্জ উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক চালকল। ফলে বাধ্য হয়েই ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের দাবি মেনে মোকাম থেকে ধান পরিবহনে এলাকা ভেদে বস্তা প্রতি ভাড়া বাড়ানো হয় দেড় থেকে দুই টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ট্রাকের ভাড়া বাড়ানোর পর এবার আশুগঞ্জ মোকামে আসা ধানবোঝাই নৌকার ভাড়াও বস্তা প্রতি ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রভাব পড়েছে ধানের বাজারে। মোকামে এখন বিআর-২৯ ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকায়। যা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে ছিল ১০৮০-১১৫০ টাকা। আর মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০০০ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৯১০-৯৫০ টাকা করে।
আশুগঞ্জের সরকার অটোরাইস মিলের ধান ক্রেতা মেজবাহ উদ্দিন জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে হু হু করে বাড়ছে ধানের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা নিরুপায় হয়েই চালের দাম বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা। তবে ধানের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠবে।
এ প্রসঙ্গে আশুগঞ্জ উপজেলা অটোরাইস মিল মালিক সমিতির সদস্য হাসান ইমরান বলেন, তেলের দাম না কমলে ধান-চালের বাজার দর কমবে বলে মনে হচ্ছে না। উল্টো বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠতে পারে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: ওবায়দুল্লাহ জানান, ট্রাক ও নৌকার ভাড়া বাড়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই চালের বাজারে প্রভাব পড়েছে। সব ধরনের চালে দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় যদি ভারত থেকে চাল আমদানি বাড়ে, তাহলে হয়তো চালের বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ