ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মমেকে শয্যার জন্য হাহাকার

প্রকাশনার সময়: ০৫ আগস্ট ২০২১, ২২:৩৩

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আট তলা নতুন ভবনের করোনা ওয়ার্ডে কোন শয্যা খালি নেই। খালি নেই আইসিইউ শয্যা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ইউনিটের প্রতিটি ফ্লোরে, শয্যার ফাঁকে, বারান্দায় ও করিডোরসহ যে যেখানে পারছেন সেখানেই শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোভিড ডেডিকেটেড ভবনের সামনের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে এখন সার্বক্ষণিক প্রচার করা হচ্ছে শয্যা খালি না থাকার এই তথ্য।

হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান জানান, গত কয়েকদিনে রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে করোনা ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। বাড়তি রোগীর চাপে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা হিমসিম খাচ্ছেন। ফলে যে যেখানে পারছেন সেখানেই শয্যা (মাদুর দিয়ে) পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন যে হারে রোগী ভর্তির জন্য হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন তাতে যে কোন সময় চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডা. মহিউদ্দিন খান আরও জানান, করোনা ইউনিটে ৪০০ শয্যার বিপরীতে ৫৮০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরসিইউর ২২ বেডের সবগুলোতেই রোগী রয়েছে। মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে ২১০ শয্যা নিয়ে চালু হলেও গত দেড় মাস ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেডের সংখ্যা কয়েক দফা বাড়িয়ে ৪০০ করা হয়েছে। আর আইসিই ’র বেড সংখ্যা ১০ থেকে ২২টিতে উন্নীত করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানোর কাজ চলছে। তবে ২৫ শয্যার আইসিইউসহ হাসপাতালটির সর্বোচ্চ সক্ষমতা রয়েছে ৫০০ শয্যার।

বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর. শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার বাইরে আশপাশের টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলা থেকেও উন্নত চিকিৎসা সেবার আশায় করোনা রোগীরা ভর্তি হতে আসছেন এই হাসপাতালে। ফলে রোগীর চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। সঙ্কট মোকাবেলায় ময়মনসিংহের বেসকারি কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশ-সিবিএমবিসিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নব নির্মিত তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সূর্যকান্ত সংক্রামক ব্যাধির হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

এদিকে কোভিড ডেডিকেটেড ভবনের সামনের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে এখন সার্বক্ষণিক প্রচার করা হচ্ছে শয্যা খালি না থাকার এই তথ্য। ওয়ার্ড ও আইসিইউতে শয্যার সংখ্যা বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর চাপ আরও বাড়লে শয্যার অভাবে যে কোন বন্ধ হয়ে যেতে পারে করোনা রোগীর ভর্তি কার্যক্রম।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এসব রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে কমপক্ষে ১৫০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। অথচ এর বিপরীতে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৮০ জন চিকিৎসক। এর মধ্য ১৫ জন চিকিৎসক মেটারনিটি সমস্যা ও ব্রেষ্ট ফিডিংয়ের জন্য করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে করোনা রোগীদের জন্য আছেন বর্তমানে ৬৫ জন। এমতাবস্থায় নন কোভিড হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসক নিয়ে পালা করে সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে করে নন কোভিড ও কোভিড রোগীদের সেবা কার্যত ব্যহত হচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ার সাথে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্কট হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আন্তরিকতা দিয়ে এই সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোন রোগীকে ফিরিয়ে না দিলেও যে কোন সময় এই পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবীর জানান, শয্যা খালি না থাকায় করোনা রোগীদের ভর্তিসহ সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা, প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে চলমান অক্সিজেন সঙ্কটের এখনও কোন কার্যকর সমাধান হয়নি। হাসপাতালটিতে ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে পাওয়া প্রায় ৩ হাজার সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের চাহিদা সামাল দেয়া হচ্ছে। রিফিল ও পরিবহনের সময় পথে যানজটের কবলে আটকা পড়ায় এসব সিলিন্ডার সময়মত হাসপাতালে আসছে না। কঠোর বিধি নিষেধ উঠে গেলে সড়কে যানবহনের চাপ বাড়লে এই সঙ্কট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরকম অবস্থায় হাসপাতালে ২০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার আলাদা দুটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট অবিলম্বে চালুর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় মোট করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯১। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৩৩০ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ১৮১ জন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ