নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নে ব্রাহ্মণজাত গ্রামের আনোয়ার জাহিদ মল্লিক ওরফে ওয়াসিম। যিনি বাড়িতেই ফলান ১৭০ রকমের ফল। তবে ওয়াসিম মাল্টা চাষ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাসায়িক কিটনাশকমুক্ত জৈব সার ব্যবহারে সফলতাও পাচ্ছে এই ফলচাষি।
শ্রাবণে বৃষ্টিভেজা মাল্টা গাছের সবুজ পাতাগুলো যেন আরো সবুজ হয়েছে। সেই সবুজকে আরো আলোকিত করে গাছে গাছে ঝুলে আছে সবুজ মাল্টা। ফলের ভারে নুয়ে পড়ে প্রতিটি গাছ যেন মাটির সবুজ ঘাসের সাথে মিতালী করছে। এমন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য মাল্টা চাষে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে স্থানীয় সৌখিন কৃষকদের মাঝে। সফল ফলচাষি ওয়াসিম অনেকের কাছে এখন অনুকরণীয়।
ওয়াসিম ময়মনসিংহের গৌরীপুরের একটি নার্সারি থেকে প্রায় ৩০০ চারা সংগ্রহ করে ৩৩ শতক জমির ওপর প্রথমে মাল্টা চাষ শুরু করেছিলেন প্রায় ৫ বছর আগে। বর্তমানে বাগানের পরিধি বাড়িয়ে ৫০ শতক জায়গায় মাল্টা চাষ করছেন।
গত দুই বছর ধরে তার বাগানে ফলছে মাল্টা। এবারো ভাল ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বিক্রয় শুরু করেছেন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে ভালই লাভবান হবে বলে জানান ওয়াসীম।
তার মাল্টা বাগান ছাড়াও উন্নতজাতের বারোমাসি বারি-১১ আম বাগান, বারি-৪ আম বাগান, কুল, বারোমাসি সাজনা, লেবুর বাগান।
তাছাড়াও প্রায় ১২০ শতক জমির ওপর তার বসতবাড়িটি যেন একটি ফলবাড়ি। সারাবছরেই কোন না ফল তার বাড়ির গাছে থাকে। প্রায় ১৭০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে তার বাড়িতে। এরমধ্যে ৪০ প্রজাতির আম রয়েছে তার বাড়িতে। রয়েছে ৮৫টি কাঁঠাল গাছ, ৮টি জাম, ৬টি কমলা, ৫টি লিচু গাছ, পেয়ারা গাছ ১০টি, ড্রাগন গাছ ৬টি, ৪০টি লটকন গাছসহ পেঁপে, সুপারি, গোলাপ জাম, নারিকেল, আঙ্গুর, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, ট্যাংফল, কামরাঙ্গা, অরবড়ই, নাশপাতি, কুল, তেঁতুল, ডেফল, চালতা, সফেদা, লঙ্ঘান/আশফল, বিলম্বু, আঙ্গুর, আনারস, কলা, বেল, থাই জাম্বুরা, করমচা, জামরুল, আমড়া, আনার, ডালিম, বেদানা, চেরিফল, মহুয়া ফল, রামভূটান, কতবেল, আমলকি, শরিফা, আতাফল, তৃর্ণ ফল, এভোকাডো ফল,করোসল ফল, বিভিন্ন প্রজাপতির আপেল, স্ট্রভেরী পেয়ারা, মালবেরী, বিভিন্ন প্রজাপতি আনার, পার্সিমন ফল, শরীফা ফল ইত্যাদি।
তাছাড়া ভেষজ জাতীয় রয়েছে হরতকি, বহেরা, পাথরকুঁচি, ডায়াজেট, এ্যালোভেরা, পান বিলাপ, তুলসী, লজ্জাবতী, উলটকমল, আলোবোকেরা, লবঙ্গসহ নানা প্রজাপতির বনজ ও ঔষধি গাছও রয়েছে প্রচুর।
ওয়াসিম বাবার একমাত্র ছেলে। লেখাপড়া শেষ করে কেন্দুয়া বাজারে ‘মেসার্স মল্লিক কৃষি কেন্দ্র’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ফলের গাছ লাগানো ও কৃষি কাজের প্রতি প্রবল শখ তার। এই শখেই তিনি এখন এলাকার একজন বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন ফলচাষে ঝুঁকছেন।
ওয়াসিমের পরামর্শে তার চাচা আবুল হাশেম মল্লিক প্রায় ৩৫ শতক জমি মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ওয়াসিমের বাগানের সাথেই চাচার বাগান। এছাড়া আরো কয়েকজন মাল্টা ও কুল চাষ শুরু করেছেন তার পরামর্শে।
আনোয়ার জাহিদ মল্লিক ওয়াসীম নয়া শতাব্দীকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই গাছ লাগানো সখ ছিলো। ইউটিউব দেখে বিভিন্ন প্রজাতি গাছ সংগ্রহ করে বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করি। একটা সময় মাল্টা চাষের উদ্যোগ নেই। প্রথমে ৩৩ শতক জমিতে ৩০০ চারা রোপন করি। পরে এর সাথে আরো ২০ শতক রোপন করি। মাল্টা গাছের প্রতি যত্ন নিতে হয়। আল্লাহ রহমতে আমি সফল হয়েছি। আমার বারি-৪, বারোমাসি ও বিদেশি জাতের আম বাগান রয়েছে। একটি কুল বাগানও আছে। চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভাল হয়েছিল। বন্যার পানি বাগানে উঠায় কিছু ক্ষতি হয়েছে। তাও বেশ ভালই বিক্রয় করেছি। কিটনাশকমুক্ত জৈব সার ব্যবহার করে ফল উৎপাদন করায় আমার বাগানের ফলের চাহিদা বেশি। মানুষ মোবাইল ফোনে অর্ডার দিয়ে কিনে নিয়ে যায়। ১৭০ রকমের ফল আমার বাড়িতে ফলে। সারাবছরে আমার বাড়ি বিভিন্ন রকমের ফল থাকে। এগুলো নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রয় করে আয় করে থাকি। আমার দেখাদেখি ও পরামর্শ নিয়ে ইতোমধ্যে আরো কয়েকজন মাল্টাসহ আম ও কুল চাষ শুরু করে দিয়েছেন। আশারাখি তারাও আমার মত লাভবান হবে। আমরা সকলেই পারি প্রত্যেকের বাড়িতে বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ লাগিয়ে বাড়িটি একটি ফল বাড়ি বানাতে। নিরাপদ ফল খেতে হলে সবাইকে ফলচাষে আগ্রহী হওয়ার আহবান জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: শাহজাহান কবীর জানান, তার বাড়িটি একটি বহুমাত্রিক ফলের বাগান বলা যায়। বাড়িতে দেশীয় ও বিদেশি বহু দুর্লভ ফলের গাছ রয়েছে। এর থেকে সারা বছর তার বাড়িতে ফল থাকে। এ ছাড়া তিনি মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার মাল্টা বাগান দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কয়েকজন শুরুও করে দিয়েছেন। বারি-৪ ও বারোমাসি বারি-১১ আম চাষে সফল হয়েছেন তিনি। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ