পদ্মার নদীর ভাঙনে প্রায় বিলিনের পথে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলাশিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পটি। ইতোমধ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় ৯৫ ভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু রয়েছে সেখান থেকেও উপকারভোগী পরিবারগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাকি বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় যেকোন সময় অবশিষ্ট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নদী ভাঙন ও অসহায় ভূমিহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসতঘর দেয়ার উদ্যোগ নেন। চাঁদপুর জেলার ১৩টি আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো বলাশিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প। এটি চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলারচর গ্রামে অবস্থিত। বলাশিয়ায় পদ্মা ও মেঘনা নদী বেষ্টিত ৫টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। সেখানে ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন ১শ’ পরিবারকে আশ্রয় হিসেবে ঘর তৈরি করে দেয় সরকার। তখন ব্যারাক থেকে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় ৫ কিলোমিটার। তবে সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতবাড়ি এবার পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এরইমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ব্যারাকের প্রায় সবগুলোই মেঘনা নদীরগর্ভে বিলীন হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী ভাঙনে অনেক বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। যেসব পরিবারের বসতঘর বিলীন হয়েছে, তারা আশপাশের চরের বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪টি ব্যারাকের ৮০টি পরিবার থাকার বসতঘর পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়েছে। সবশেষে দুটি ব্যারাকের ২০টি ঘর বিলীন হওয়ার পথে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনের কারণে আমরা ঘর-বাড়ি হারিয়েছি। এরপর এখানে এসে বর্তমান সরকারের কারণে আশ্রয় পেয়েছি। আমাদের ভাগ্য খারাপ তাই নদী ভাঙন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। নদী ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চাঁদপুর সদর উপজেলা থেকে রাজরাজেশ্বরও ইউনিয়নের নাম মুছে যাবে।
সম্প্রতি আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে করেন রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তহসিলদার মো. নূরুল ইসলাম ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হজরত আলী বেপারীসহ ইউপি সদস্যরা।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের তহসিলদার মো. নূরুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে বলাশিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পটি প্রায় ৯৫ ভাগই বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু রয়েছে সেখান থেকে উপকারভোগীদের সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আশ্রয়ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাঁদপুর সদরকে জানানো হয়েছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হজরত আলী বেপারী জানান, ব্যারাকটি নির্মাণের পর প্রায় ১শ’ টি পরিবার বসবাস করতো। পদ্মা নদীর ভাঙনে একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে এখন অধিকাংশ নদীর গর্ভে। যে কোন সময় পুরো ব্যারাকটা নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। আমি ব্যারাকটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।
নয়া শতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ