দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ধানের আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধানের দামও প্রতি বস্তায় কমেছে ৫০ থেকে ৬০টাকা। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারেও। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে দাম কমেছে প্রায় ১০০ টাকা। এতে ধান ও চালের মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে চাতালকল মালিকদের।
সরকার দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারত থেকে চাল আমদানি করার উদ্যোগ নেওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে চালের বাজারদর আরও কমবে- এমন শঙ্কা থেকে ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলা শহরের পূর্ববাজার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকামে প্রতিদিন এক লাখ মণ ধান বেচাকেনা হয়। মোকামটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওর এলাকার উৎপাদিত ধান নৌকায় করে এই মোকামে নিয়ে আসে।
প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টা নৌকায় ব্যাপারীরা লক্ষাধীক মন ধান বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।দাম কমে যাওয়ার খবরে গত এক সপ্তাহ যাবত ৩০ থেকে ৪০টির বেশী ধানের নৌকা বাজারে আসছে না। ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের বেচাকেনা এখন কম হচ্ছে। বেচাকেনা কম হওয়ায় ধানের দামও কমেছে।
মোকামে এখন বিআর-২৯ ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১২০ টাকায় এবং মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০-৯২০ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও বিআর-২৯ ধান প্রতি মণ ১১৫০ থেকে ১১৭০ টাকায় এবং মোটা ধান বিক্রি হয়েছে ৯৫০ থেকে ৯৭০ টাকা দামে।
এদিকে ধানের দাম কমে যাওয়ায় বাজারে চালের দামও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকা কমে আশুগঞ্জের চালকলগুলো থেকে বিআর-২৮ চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০ টাকায় এবং বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকা দরে। ভারতীয় চাল আমদানি যদি অব্যাহত থাকে- তাহলে দেশীয় চালের দাম আরও কমবে এবং এতে লোকসানে ভয়ে আতংকে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ মোকামে কৃষকদের তুলনায় ধানের বেপারী সংখ্যা বেশি। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধান কিনে নৌকায় করে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত ঘাটে নিয়ে আসেন বেপারীরা। মূলত আশুগঞ্জের এ মোকামই জেলার ৩ শতাধীক চাতালকলের ধানের যোগান দিয়ে থাকে। আর এসব চালকলগুলো থেকে উৎপাদিত ৬০/৭০ হাজার মণ চাল সরবরাহ হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন জেলায়।
হবিগঞ্জ থেকে আসা ধান বেপারী মো. তাহের মিয়া জানান, ভারতীয় চাল আমদানির কারণে ধানের বেচাকেনা কমেছে। লোকসানের আশঙ্কায় চালকল মালিকরা ধান কম কিনছে। এতে করে ধানের দাম প্রতি মনে ৪০/৫০টাকা কমেছে। আর দাম কমার কারণে বেপারীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আশুগঞ্জ ধান ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শাজাহান সিরাজ জানান, চাতালকল গুলো শুধু চালু রাখার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, মিল মালিকরা এখন ততটুকু ধানই কিনছেন। আর এই কারণেই মোকামে ধানের বেচাকেনা কমে গেছে। তাই মিল মালিকরা ধান কম কিনছেন। ভারতীয় চাল আমদানি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের বেচাকেনা আরও কমবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. উবায়দোল্লাহ বলেন, দিন দিন চাতালকল গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকার যখন ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তখন থেকেই ব্যবসায়ীরা ধান-চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ভারতীয় চাল আমদানির কারণে চালের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা কমেছে। যদি অবাধে চাল আসে ভারত থেকে তাহলে দেশীয় চালের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চালের দাম যদি আরও কমে তাহলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে।
নয়া শতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ