ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
সেচ নির্ভর ধানের আবাদ

বরেন্দ্র অঞ্চলে কমছে আমন চাষ

প্রকাশনার সময়: ২৭ জুলাই ২০২২, ১৮:০৫

প্রকৃতির বৃষ্টিতেই আমন ধান চাষে মেতে উঠতেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। আষাঢ়-শ্রাবণে আমন ধান চাষে কৃত্রিমভাবে সেচের পানির প্রয়োজন হতো না । কিন্তু এবছর কাঙ্খিত বৃষ্টি হচ্ছে না। এতে খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কমছে আমন ধানের চাষ। ফলে ধানের দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কৃষকরা এখনও বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রতিদিন আকাশে মেঘ দেখা গেলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। যে পরিমাণ বৃষ্টি দরকার সেই পরিমাণে বৃষ্টি নেই। এতে কৃষকদের আবাদি জমি এখন যেন ফাঁকা মাঠে পরিণত হচ্ছে। তবে রাজশাহী জেলার বেশ কিছু উপজেলায় বৃষ্টি অপেক্ষায় না থেকে কৃত্রিমভাবে সেচের পানিতে আমন ধান রোপন করতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর থেকে বৃষ্টিপাত কমছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। গত বছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ২৫ দিন। আর এবছর আষাঢ়ে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র আটদিন। গত বছর ৩৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবছর তা হয়েছে মাত্র ৩৯ দশমিক দুই মিলিমিটার। এক বছরের বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৮৯ শতাংশ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র আটদিন। যা ৩৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে সেটাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সময়ের জন্য। এ আটদিনের মধ্যে গত ১৮ জুন সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ দশমিক ৯ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ জুন ৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। এরপর আর ৩ দশমিক ৬ মিলিমিটারের উপরে ওঠেনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। ২৬ জুন এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়াও ১৭ জুন ও ২১ জুন দুই মিলিমিটার, ২৪ জুন ০ দশমিক ৪ মিলিমিটার, ৩০ জুন ০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং ৩ জুলাই ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গত বছরের চেয়ে এক আষাঢ় মাসেই বৃষ্টি কমেছে ৩১৪ দশমিক ৯৮ মিলিমিটার।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারি পর্যবেক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে এক ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বাড়ছে। গতবছর বৃষ্টিপাতের সময় তাপমাত্রা ছিল ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রির ঘরে। কিন্তু এই বছর বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা উঠানামা করেছে।

রাজশাহী আবহওয়া অফিসের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক গাউসুজ্জামান জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত অনেক কমেছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। কেননা রাজশাহীতে যে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে তার চেয়ে কাটা হচ্ছে বেশি। আবার নদীর নাব্যতাও কমেছে। সব মিলিয়ে জলবায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আবহওয়ার খামখেয়ালিপনা বাড়ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৩৪ বছরে মার্চ থেকে জুলাই মাসে তাপপ্রবাহের সময়কাল ক্রমেই বেড়েছে। প্রতি মাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, রাজশাহী যে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। আমরা গবেষণা করে যেটা পেয়েছি তা হলো, প্রতিবছর দশমিক ০০৩ করে তাপমাত্রা বাড়ছে।

এই সহযোগী অধ্যাপক মনে করেন, রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ার কারণ জলাশয় ও পুকুর ভরাট, বৃক্ষ নিধন, বহুতল ভবন নির্মাণ। এজন্য রাজশাহীর তাপমাত্রা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। তাপপ্রবাহ মোকাবেলা করার জন্য এখন থেকে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ