প্রেমিকার টানে ইতালি থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বিয়ে করেছেন ইতালিয়ান যুবক আলিসেন্ড্রা ছাছিয়া ছিয়ারোমোন্ডা।
সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে সনাতন ধর্মের রীতি অনুসারে তিনি বিয়ে করেন। কনে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর দিনমজুর মারকুস দাসের মেয়ে রত্না রানী দাস।
উপজেলার চাড়োল ইউপি চেয়ারম্যান দীলিপ কুমার চ্যাটার্জী বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেশী জতিন চন্দ্র বলেন, এটি আমার দেখা ব্যতিক্রমী বিয়ে। ইতালির ছেলে আর আমাদের গ্রামের বিয়ে। পাত্রী দেশের আর পাত্র বিদেশের। অনেক আনন্দ ও উল্লাস করেছি বিয়েতে। এখন মেয়েকে বলে জামাই ইতালিতে নিয়ে যাবেন। জামাই অনেক ভদ্র৷ আমরা অনেক খুশি।
পাত্রকে দেখতে আসা প্রতিবেশী চম্পা খাতুন বলেন, এর আগে বিয়ে দেখতাম নিজ দেশের ছেলে ও মেয়েকে। এবারে ব্যতিক্রমী একটা বিয়ে দেখলাম। দেশের বাইরের পাত্র আর আমাদের এলাকার পাত্রী৷ দেখে অনেক ভালো লাগলো।
স্থানীয় কানু রায় বলেন, বিয়েতে আমরা অনেক আনন্দ করেছি। বিদেশ থেকে কেউ এসে বিয়ের ঘটনা গ্রামে এই প্রথম।
রত্না রানীর মা জানগি দাস বলেন,আমার দেবর তার পরিবার নিয়ে ইতালি থাকে। সেখান থেকে আমাদের প্রস্তাব দেয়। পরে প্রস্তাবের মাধ্যমে আমার মেয়েকে জামাই পছন্দ করে। পরে আমরা ধুমধাম করে এবং আয়োজন করে বিয়ে সম্পন্ন করেছি। আমার জামাই আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে আমরাও যাব।
কনের বাবা মারকুস দাস বলেন, আমি গরীব মানুষ। ইতালি নাগরিক আমার বাড়িতে এসেছেন। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হলেও এখন বেশ আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে যোগ্যপাত্রকে কন্যা দান করেছি।
কনে রত্না রানী দাস বলেন, আমাদের প্রেম বিয়েতে রূপ নিয়েছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আমাদের জন্য আশির্বাদ করবেন।
রত্না রানী আরও বলেন, আমার চাচা ইতালিতে থাকেন৷ সেখানে পরিবার নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন৷ পরে আমার চাচা আমাদের বাড়িতে আমার জামাইয়ের প্রস্তাব দেন। পরে মোবাইলের মাধ্যমে আমরা ইমুতে যোগাযোগ করি৷ একে অন্যের সাথে আমাদের সম্পর্ক হয়। আমরা প্রায় সাত মাস ধরে মোবাইলে কথা বলি। আমার চাচা আমাকে কিছু ভাষা শিখিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেগুলো দিয়ে তার সাথে আমি কথা বলি৷ তারপরে গতকাল আমাদের বিয়ে হয়৷ জামাই হিসেবে তিনি অনেক ভালো মনের মানুষ৷ তিনি সবকিছু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেন৷ তার সাথে আমি আমার চাচা যে ভাষায় কথা বলা শিখিয়েছেন সেভাবে বলছি। ভাষাগুলো শিখতে আরো সময় লাগবে৷ আমি চেষ্টা করছি।
আলী সান্দ্রে চিয়ারোমিন্তে বলেন, আমার বউয়ের চাচার সাথে আমার দেশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করি৷ সেখানে দেখেছি বউয়ের চাচা উনারা অনেক সুন্দর করে দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করেন৷ সেখান থেকেই আমি অনুপ্রাণিত হয়ে জোসেফ চাচাকে বলি বাংলাদেশে বিয়ে করার কথা। তিনি আমার বউয়ের বিষয়ে আমাকে প্রস্তাব দেন। আমার অনেক পছন্দ হয়। আগে মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলেছি। গতকাল এসে এখানে আয়োজন করে বিয়ে করেছি। আমার বউ ও তার পরিবার অনেক ভালো। তারা অনেক আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ৷ আমি আমার বউকে আমার দেশে নিয়ে যাব। পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি আমার বউকে আমি নিয়ে যাব।
চাড়োল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি চাচা জোসেফ ও ইতালির ছেলেটি একসাথে ইতালিতে একই অফিসে কাজ করতেন। মূলত জোসেফ ও তার বউয়ের পারিবারিক দাম্পত্য জীবন দেখে বাঙালি মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন তিনি। গতকাল ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল আনাম ডন বলেন, ইতালিয়ান নাগরিক এসে বিয়ে করেছেন। আমরা শোনা মাত্রই সেখানে সার্বিক নিরাপত্তা দিয়েছি।
নয়া শতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ