শ্রাবণ মাস। উপযুক্ত সময় আমন ধান রোপণের। অথচ ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। বৃষ্টির দেখা নেই। মারা যাচ্ছে বীজতলায় ধানের চারা। আকাশপানে চেয়ে আছেন কৃষক। মহাবিপাকে পড়ে ঘরের কোণে অলস সময় কাটাচ্ছেন কক্সবাজার জেলার হাজার হাজার কৃষকরা। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ সেচযন্ত্র চালুর মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়ে ধান রোপণের পরামর্শ দিয়েছে।
সদরের খরুলিয়া কোনারপাড়া গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আমন ধানের ক্ষেত প্রস্তুত ও রোপণ সম্পূর্ণ বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। জমিতে পানি না থাকায় আমন ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। একদিকে পানির অভাবে জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে পানির অভাবে বীজতলা শুকিয়ে ধানের চারা মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মহাবিপদে আছেন চাষিরা।
একই গ্রামের কৃষক শামশুল আলম জানান, অন্যান্য বছর এই দিনে জমিতে আমন ধান লাগানো প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি না থাকায় ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। অপেক্ষা বৃষ্টির। আমন চাষে বিঘ্ন ঘটলে প্রান্তিক চাষিরা লোকসানে পড়বে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, বোরো মৌসুম শেষে সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানি সরবরাহ করতে পারেনি কৃষকরা। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী সপ্তাহের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হয়নি এমন মৌসুম তেমন হয়নি। বর্তমানে শ্রাবণ মাস চলমান রয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন অবস্থা আরো এক সপ্তাহ চলতে পারে।
কক্সবাজার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর আউশ ও ৭৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর আমন চাষ হয়। বর্তমানে আউশ ধান বের হওয়ার সময়। অনাবৃষ্টির কারণে এখন থমকে গেছে। যার ফলে সবই খোসা হয়ে পড়বে। এছাড়া আমন শুরু হবে। সর্বত্র আমনের বীজতলা তৈরি করার সময়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ কৃষক বীজ তলা তৈরি করতে পারেনি। বীজ তলা ফেটে এখন চৌচির। অপরদিকে প্রতি বছর এই সময়ে আগাম সবজি চাষের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে আসনে কৃষকরা। কিন্তু পানির অভাবে পর্যাপ্ত সবজির ফলন হয়নি। মূলত সেচ পাম্প এর বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন থাকায় সমস্যা প্রকট হয়েছে। বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল থাকেন কৃষকরা।
চকরিয়া শাহারবলি ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক আজগর আলী জানিয়েছেন, বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সময় এখন শেষ। প্রতিবছর আগাম সবজি যা ফলন হয় এই মৌসুমে তার অর্ধেকও ফলন হয়নি। সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় যথাসময়ে সবজি ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা যায়নি। এতে অর্ধেক চাষ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রত্যেক কৃষকের বেলায় এই অবস্থা অবস্থা হয়েছে।
রামুর গর্জনিয়ার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন আউশ ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এছাড়া পানির সমস্যার কারণে কোনভাবেই আমনের বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। বীজতলা ফেটে এখন চৌচির। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে সেচ পাম্প চালু করে সমস্যার সমাধান করা যেত। বোরো মৌসুমের পরে সে পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা চাই তিন মৌসুমে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখা হোক।
মহেশখালীর কালারমারছড়ার মিজ্জির পাড়ার কৃষক শফিউল আলম বাঁশি জানিয়েছেন আউশ ধান বৃষ্টির কারণে থমকে থাকায় পানের বরজ তৈরি করার কাজও পিছাতে হচ্ছে। যথা সময়ে পানের বরজের কাজ করতে না পারলে পান চাষে লোকসান যাবে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ভারপ্রাপ্ত আশিষ রঞ্জন নাথ জানান, আউশ ধান কিছুটা খরার মধ্যে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ মৌসুম শেষ হতে কিছুদিন বেশী লাগবে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে আমন মৌসুম শুরু করতে একটু সময় নিতে হবে কৃষকদের।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ