বাংলা সাহিত্যে তমালের উপস্থিতি উজ্জল। রাধা-কৃষ্ণের সুবাদে সাহিত্যের নানা শাখায় আছে তমালের কথা। তমালের ডালে বসেই কৃষ্ণ যে বাঁশি বাজিয়েছেন! এ সুর রাধার মনকে উদ্বেল করেছে।
রাধার কথা ভেবেই হয়তো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ওরে তরু তমাল শাখা/ আছে পল্লবে তোর মোর বল্লভ কৃষ্ণ কান্তি মাখা/ আমি তাইতো তমাল কুঞ্জে আসি/ তাইতো তমাল ভালোবাসি/ তোর পথছায়ায় আছে যে তার চরণচিহ্ন আঁকা।’
আর তমালের কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেন এইভাবে- গহন ঘন বনে পিয়াল-তমাল-সহকার-ছায়ে, সন্ধ্যাবায়ে তৃণশয়নে মুগ্ধনয়নে রয়েছি বসি, শ্যামল পল্লবভার আঁধারে মর্মরিছে, বায়ুভরে কাঁপে শাখা, বকুলদল পড়ে খসি।
এটি একটি দীর্ঘজীবী চিরসবুজ গাছ। মাঝারি আকৃতির গাছটির কাণ্ড খাটো, অমসৃণ, আঁকাবাঁকা। বসন্তে ফুটে ছোট সাদা ফুল। ফল দেখতে ছোট গাবের মতো গোল, হলুদ রঙের। এর আদি নিবাস মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে। তমালের উদ্ভিদজাত নাম (Diospyros cordifolia) তমাল নিয়ে এত কথা থাকলেও গাছটি সচরাচর দেখা যায় না। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তমাল খুব ধীরে ধীরে বাড়ে। অনেক দিন লাগে বড় হতে।
গাছটি দুর্লভ, তবে একেবারে হারিয়ে যায়নি। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আছিম পাটুললী ইউনিয়নের রামনগর পিটিভি বাজারের পূর্ব পাশে কামারপাড়া নামে পরিচিত তরফদারদের বসত ভিটায় প্রায় ৫’শ বছরের ২টি বিশাল আকৃতির তমাল গাছ আছে। একটির নাম রাধা অপরটির নাম কৃষ্ণ। বাংলা সালের অগ্রহায়নের শেষে পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাধাকৃষ্ণ নামের মন্দিরে ২দিন ব্যাপী পূজা অর্চনা করেন হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়ের অনুসারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে সাবেক শিক্ষক শ্রী শুভাষ চন্দ্র তরফদার বলেন, এই পূজা দীর্ঘ দিন ধরে আমরা পালন করে আসছি এবং প্রচুর শুভাকাঙ্ক্ষী ভক্তরা গাছটির নিচে সমাবেত হয়ে রাধা কৃষ্ণের স্মরণে মন্দিরে পূজা অর্চনা ও প্রার্থনা করেন। জাতিগত কৃষ্টি কালচার রীতিনীতি, সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী হয়ে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা আয়োজনে গাঁথা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মালা উদযাপন করা হয়।
রাধাকৃষ্ণ বৃক্ষ থেকে ১০০ গজ পূর্ব পাশে আরেকটি ৫ শত বছরের সম সাময়িক বয়সের তমাল বৃক্ষ ছিল। গত ২০১৬ সালে আকস্মিক এক ঝড়ে বৃক্ষটি মাঝখানে ভেঙে যায়। ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া বৃক্ষের অর্ধাংশ এখন মরে অল্প অল্প করে বিলুপ্তির পথে। এক সময় সু বিন্যাস বিস্তৃত জায়গাজুড়ে গাছগুলোর সৌন্দর্য শোভা বর্ধন করত। বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখির কলরব শোনা যেতো। এখনও অল্প সংখ্যক পাখির কিচিরমিচির শব্দে সন্ধ্যায় পাখিদের নীড়ে ফিরতে দেখা যায়। তবে আগে যে সব পাখিদের আনাগোনা ছিল তারমধ্যে চিল, শকুন, টিয়া পাখিদের আর দেখা যায়না।
আছিম বহুমুখী উচ্চা বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শ্রী সুনীল চন্দ্র তরফদার নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘আমার দাদা শ্রী জয় চন্দ্র তরফদারের কাছে শুনেছি তার দাদাও বলতে পারেনি। আমাদের ৬ পুরুষেও বলতে পারে নাই প্রকৃত বয়স কতো।’
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ