ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তাড়া‌শে বিয়ের ধুম

প্রকাশনার সময়: ১৭ জুলাই ২০২২, ১৭:০৩ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২২, ১৭:১৮

পবিত্র ঈদুল আজহা শেষে তাড়াশের চলনবিলাঞ্চলের গ্রামগঞ্জে লেগেছে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের ধুম। ধর্মীয় প্রথা অনুসারে তিথি নক্ষত্রের কারণে বাংলা পঞ্জিকা মতে ভাদ্র মাসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহ হয় না তেমন। এরপরই রয়েছে বাঙালির বড় ধর্মীয় শারদীয় দুর্গোৎসব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা কয়েকদিন আগেই শেষ হ‌লো। সরকারি ছুটি শেষে অনেকেই কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই অনেকে কর্মস্থলেও যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ বাড়তি ছুটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আরো কয়েকটা দিন কাটাচ্ছেন।

ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে অনেকে বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় করলেও বিলাঞ্চলের এ জনপদে গ্রামে গ্রামে দৃশ্যপটে কিছুটা ধুমধাম পরিবেশ চোখে পড়ে। কারণ মাছে-ভাতে বাঙালির মাছ ও ধান উৎপাদনে চলনবিলের সুনাম দেশজুড়ে। চলতি বছর ইরি বোরো মৌসুমের ধান কাটা অর্থাৎ ফসল সংগ্রহ বা আবাদ বন্ধ থাকার কারনে ঈদ পরবর্তী সময়ে পূর্বনির্ধারিত বিয়ের ধুম পড়েছে এ জনপদে।

গত ৭ দিনে তাড়াশ পৌর মহল্লার প্রফেসার পাড়া, দক্ষিণ পাড়াসহ বিভিন্ন মহল্লার বাড়িতে দেখা যায় কন্যা তুলে দেওয়ার আয়োজন, কোনো বাড়িতে চলছে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান। সজল ফুল ঘরের গোপাল সরকার জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা থাকে বেশ। গাড়ি সাজানো, বর-কনের বিবাহ বাসর সাজানো, বৌ-ভাতে প্যান্ডেল, হলুদ মঞ্চ সাজানো ও অভ্যর্থনায় ফুলের বেশ কদর। তাই বিয়ের মৌসুমে ফুলের দাম ও চাহিদা দুটোই বেড়ে যায়।

তাড়াশ পৌর সদরের মাহবুব কাজী, সাংবাদিক ও প্রায়াত রুহুল আমিনের ছেলে তাসাদ্দেক কাজী, পুরোহিত রতন ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন এলাকার বিয়ে নিবন্ধনকারী ও ঘটকরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির পরের সময়টায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বা উৎসব দেখা যায় এ অঞ্চলে। যার কমতি নেই এ বছরও। আগামী শুক্রবার জুম্মাবারেও মেয়ে বা ছেলে বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন বেশি রয়েছে।

এদিকে গত সোমবার (৫ জুলাই) তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শম্ভু মালের ছেলে সুজন মালেসহ একই পাড়ার টুটুল সাহার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। তারা বরযাত্রী হয়ে গিয়েছেন কনের বাড়িতে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর উঠানে প্যান্ডেল করে কয়েক‘শ লোকের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাড়ির দরজা থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছিল তোরণ।

প্রবীণ ব্যক্তি প্রশান্ত ঘোষ, প্রকাশ সরকার, মিজানুর রহমান মোল্লা, আবু তাহের, শামিম সরকারসহ আলো অনেকের সাথে বিয়ের আলোচনা প্রসঙ্গে তারা জানান, বর যাওয়ার পর গেট ধরা, শরবত খাওয়ানো, বরের পায়ের জুতা নিয়ে যাওয়া, খাবার শেষে হাত ধুয়ে দেওয়াসহ নানা প্রণয়-কলহের মধ্য দিয়ে বাড়ির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বায়না করছেন টাকার। এ যেন রীতির নীতি। কারণ এ আনন্দে বড়রাও ছোটদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মধ্যস্ততা করে বরপক্ষের কাছ থেকে কিছু টাকা তো এনে দিচ্ছেন।

এদিকে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক শ্যামলী সরকার জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধন সরকারিভাবে ঐচ্ছিক। তারপরও বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ, সাত পাকে বাঁধা, হোমযজ্ঞের পাশাপাশি বিয়ের নিবন্ধন করাচ্ছেন অনেককেই। আগের তুলনায় বিবাহ নিবন্ধনও বেড়েছে বহুগুণে।

অপরদিকে ঈদের পর বিয়ের ঝামেলাটা একটু বেশি, আর এবার আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তীব্র তাপদাহে প্রাণীকূল অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আর এই তাপদাহের কারনে ও ঘন ঘন লোডশেডিংর জন্য আরেকটু বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের ।

ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান নিপু ও বিদ্যুৎ রায় জানান, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হাতে ৭টির বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজ রয়েছে। তবে ঈদের ছুটির কারণে কর্মস্থলে শ্রমিক সংকটও রয়েছে উল্লেখযোগ্য। তারপর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে চলনবিলের বিয়ে শাদীর কারণে অর্থনৈতিকভাবেও চাঙ্গা রয়েছে ভিডিও ক্যামেরাম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিয়ের উপকরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, মাছ, মশলাসহ সবকিছুরই বাজারও বেশ চড়া বলে জানালেন ইব্রাহিম হোসেনসহ আরো অনেকে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ