ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
কোরবানির ঈদ

খাইটা কিনতে ভিড়, মিলছে আড়াই থেকে ৩শ’ টাকায় 

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুলাই ২০২২, ২২:১৬

কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটির কাজে ছুরি ও চাপাতির সাথে অবশ্যই দরকার পড়ে গাছের শক্ত গুড়ি কেটে বানানো খাইটা। ফরিদপুরের বাজারে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এ ধরনের একেকটি খাইটা বিক্রি হচ্ছে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত। ঈদুল আযহার দিন ঘনিয়ে আসায় এখন ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে বিক্রি হচ্ছে এই খাইটা। প্রত্যেক বছর কোরবানির ঈদের সময় এসব কাঠের খাইটা বিক্রি করেও আয় উপার্জন করেন অনেকে। তবে পেশাদার কসাইদের কাজে ব্যবহৃত খাইটার দাম আরো বেশি।

জানা গেছে, কোরবানির ঈদের আগে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীও এই খাইটার বাজার ধরতে অন্য ব্যবসার পাশাপাশি বিক্রি করছেন খাইটা। বিভিন্ন দোকান ও রাস্তার পাশে সেগুলো সাজিয়ে রেখেছেন খরিদ্দারদের জন্য। ঈদের দিনে কোরবানির গরু ছাগল কাটার কাজে ব্যবহার হবে এগুলো।

শহরের রেলস্টেশন সড়কের প্রবেশমুখের মোড়ে বিক্রির জন্য এমনই কিছু খাইটা সাজিয়ে রেখেছেন পাশের চা দোকানি জাফর শেখ। তিনি জানান, আড়াইশো থেকে তিনশো টাকায় এগুলো বিক্রি করেন তিনি। আর পাহাড়ি এলাকা থেকে আনা তেতুল গাছের গুড়ি ছোট ছোট খন্ড করে কেটে তিনি এ খাইটা বানিয়েছেন।

জাফর শেখ জানান, খাইটা বানাতে দরকার হয় তেঁতুল কিংবা বেলের মোটা গুড়ি। তবে বেল গাছ তেমন না পাওয়ার কারণে এখন বাজারে তেঁতুল গাছের খাইটাই বিক্রি হচ্ছে সাধারণত। সমতল এলাকার চেয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের তেঁতুলের গুড়ি সহজলভ্য এবং দামেও কম। ছোট বড় পশুর হাড় ও গোস্ত কাটতে চাপাতি দিয়ে জোরালো কোপ দিতে হয়। অন্যান্য গাছ দিয়ে বানানো গুড়ি এই আঘাত সহ্য করতে পারে না। আবার গোস্ত কাটার পর গুড়ি থেকে কেটে আসা কাঠের টুকরোও লেগে থাকে অনেকসময়। এজন্য খাইটা বানাতে বেল বা তেঁতুলের গুড়ির কোন বিকল্প নেই।

শহরের পূর্ব খাবাসপুরের গোস্ত বিক্রেতা রাজা কসাই জানান, সারাবছর এই খাইটা ব্যবহার করেন তারা। তবে তাদের মতো পেশাদার কসাইদের খাইটা আকারে বড় এবং মজবুত। একটি ভালো খাইটার দাম এক হাজার টাকারও বেশি।

মধুখালীর মেগচামির আবুল কালাম বিশ্বাস নামের এক কসাই জানান, একটি গরু কাটার কাজে প্রতি দশ হাজারে আড়াইশো টাকা মজুরি নেন। এতে এক লাখ টাকার একটি গরু কাটার জন্য দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। তবে স্থানভেদে এর পরিমাণ কমবেশি হয়।

কোরবানির ঈদে পেশাদার কসাইদের পাশাপাশি অন্যরাও উপার্জনের সুযোগ হিসেবে এই কোরবানির গরু ছাগল কাটার কাজ করেন। এতে ঈদের দিনেই একাধিক পশুর গোস্ত কাটাকাটি করে একাজে অনেকের আয়ও হয় ভালো। এতে একেকজন কসাই একাধিক গরু কাটাকাটি করে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্তও আয় করেন। তাদের সহযোগিদেরও রোজগার হয় হাজারের উপর।

আবার অনেকে নিজেদের কোরবানি দেয়া পশুর হাড় মাংস কাটার কাজটি নিজেরাই করে ফেলেন। তবে একাজেও তাদের ছুরি চাপাতির সাথে অবশ্যই দরকার পড়ে এই গাছের গুড়ির খাইটা। কোরবানির মাত্র একদিন বাকি। এখন কোরবানির আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি হিসেবে খাইটা ক্রয়েও ছুটছেন অনেকে।

খাইটা কিনতে আসা রহিম শেখ বলেন, বছরের একদিনের জন্য খাইটা কিনতে আসলাম। আসলে প্রতিবছরই একটি করে কিনে থাকি। আগের বছরগুলোতে যেগুলো কেনা হয়, সেগুলো নষ্ট হয়ে যায় অযত্নে অবহেলায়। তাই নতুন করে কিনলাম আবার। অনেকে গত বছরেরটা দিয়েই এবছর কোরবানির পশুর মাংস বানাবে।

তিনি আরো জানান, একটি কিনেছি ভালোমানের ৩শ টাকা দিয়ে। দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে, কিন্তু কোরবানির সময় দাম একটু বেশি হলেও কিনতেতো হবেই। আর তাছাড়া সব সময় পাওয়াও যায় না।

ঈদ সামনে রেখে পশুর হাট ও গোস্তের বাজার এলাকা ছাড়িয়ে শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে এই খাইটা। রাস্তার পাশে তারা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন এসব কাঠের খাইটা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ