ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবহন সংকট, ট্রাকই ফিরছেন নীড়ে (ভিডিও)

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুলাই ২০২২, ২০:১৭ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২২, ২০:৩০

আর মাত্র এক দিন পরেই মুসলমান ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। সে উপলক্ষে কর্মজীবী মানুষেরা কাজের বিরতি দিয়ে নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরতে ব্যাস্ত। কালিয়াকৈর একটি শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানে বিভিন্ন জেলা হতে আগত লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরসহ আশপাশের শিল্প কারখানা গুলো একত্রে ছুটি হওয়ার পর যাত্রীদের ঢল নামে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। পরিবার ও আপনজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এই কর্মজীবী মানুষেরা। এত যাত্রী একত্রে বের হওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। এদিকে আবার পরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় হচ্ছে উত্তরবঙ্গসহ ২৬টি জেলার মানুষের যাতায়াতের প্রবেশমুখ। তাই শুক্রবার (৮ জুলাই) ভোর থেকেই কোনাবাড়ি, জয়দেবপুর, আশুলিয়া ও সাভার এসব এলাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য চন্দ্রা টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে ভাড়া বেশি দিয়েও পরিবহন পাচ্ছেন না এসব যাত্রীরা। তাই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। পরিবহন সংকট ও ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পশুবাহী ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাস।

সরেজমিনের দেখা যায়, যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে যাত্রীবাহী বাসের পরিবর্তে ব্যবহার করছে পশুবাহী ট্রাক, পিক আপ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের থেকে ট্রাকের সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে। উপায় না পেয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে পশুবাহীর ট্রাকে চেপেই পরিবার নিয়ে গন্তব্যে ছুটছে এসব ভুক্তভোগী যাত্রীরা।

এদিকে বিকেল গড়াতেই টার্মিনালের উভয় পাশে বেশ যানজট দেখা দিয়েছে। ধীর গতিতে থেমে থেমে চলছে পরিবহন। টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে দীর্ঘ যানজট সে দিক থেকেও গাড়ি আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, সময় ও খরচ হচ্ছে ব্যাপক। এ অবস্থায় ধারণা করা যাচ্ছে- রাত যত গভীর হবে ভোগান্তি তত চরমে পৌঁছাবে। মহাসড়কের পাশে জায়গায় জায়গায় অনেক যাত্রীদের স্ত্রী সন্তানসহ পরিবার নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের আহাজারিতে ক্রমেই মহাসড়ক ভারী হয়ে উঠছে।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের এক যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। গোপালপুরের ভাড়া হচ্ছে দেড়শ’ টাকা। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা বলছে- এখন যদি যাও তাহলে ৫০০ টাকা ভাড়া লাগবে তাও আবার দাঁড়িয়ে যেতে হবে, গেলে চলো না গেলে থাকো।’

বয়স্ক এক যাত্রী ধানবাড়ি যাবেন। তিনি বলেন, ধনবাড়ী ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে যাই কিন্তু এখন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাচ্ছে। কীভাবে বাড়ি যাবো- আমার কাছে তো এত টাকাও নেই।

আজহার নামের একজন বলেন, আমি বগুড়া যাব কোন গাড়ি পাচ্ছি না। ট্রাকে করে যেতে চাচ্ছি তাও ৪০০ টাকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাচ্ছে।

মর্জিনা নামের এক যাত্রী বলেন, টাকা কোন বিষয় না। এখন তো গাড়ি পাচ্ছি না; কীভাবে বাড়ি যাব? অনেকক্ষণ যাবত বসে আছি, আমরা সেই ১টা ৩০ মিনিটে চন্দ্রায় এসেছি- এখন ছয়টা বাজে।

সুজা নামের এক বাসচালক বলেন, আমি সিরাজগঞ্জ থেকে চন্দ্রায় নয় ঘণ্টায এসেছি। এভাবে যানজট থাকলে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। যানজট বেশি থাকার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। রাস্তায় অনেক যাত্রী আছে কিন্তু আমরা নিতে পারছি না।

শাহজাহান নামের আর এক বাস চালক বলেন, আমি রংপুর যাচ্ছি। যাত্রীর অনেক চাপ, ভাড়াও সীমিত আছে।

সালনা হাইওয়ে থানার ওসি ফিরোজ মাহমুদ বলেন, যানজট নিরশনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে গত ঈদের তুলনায় এবার যানজট এবং ভোগান্তি অনেক কম। আমরা রাত দিন সব সময় যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের চন্দ্রা বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম সফিউল্লাহ বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

তিনি আরো বলেন, আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও মহাসড়কে ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল রোধ, চাঁদাবাজি, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যানজট নিরসন। আমরা সেটিও কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আশা করি- বিকেল থেকেই সড়কে যানবাহন ও লোকজনের চাপ কমে যাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ গোলাম রাব্বানি, জেলা গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নন্দিতা মালাকার, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকবর আলী খানসহ অন্যরা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ