ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সুদিন ফেরার প্রত্যাশায় গাইবান্ধার কামার শিল্পীরা

প্রকাশনার সময়: ০৮ জুলাই ২০২২, ১৯:৩২

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। দীর্ঘ দুই বছর করোনায় বিপর্যস্ত সময় কাটানোর পর এবার কিছুটা সুদিন ফেরার প্রত্যাশা করছেন কামার শিল্পীরা। ঈদকে ঘিরে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার কামার সম্প্রদায়ের লোকজন।

সরেজমিন শহরের পুরাতন বাজার, বালাসি রোড, সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের বেড়াডাংগা, লক্ষিপুর ইউনিয়নের লক্ষিপুর বাজার, কামার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কামারদের ঘরগুলো লোহা হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখর। পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ির আঘাতে তৈরি হচ্ছে কোরবানি ঈদের জন্য দা, বটি, চাকু, কুড়াল, ছুরি, চাপাতিসহ ধারালো সব যন্ত্রপাতি। কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছেন, কেউ লোহা আগুনে পুড়ে লাল করছেন, কেউ আবার পুরনো অস্ত্র ধার দিচ্ছেন। সারা বছর কাজ সীমিত থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তাদের এমন কর্মব্যস্ততা। তবে কয়লা, লোহা ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে এ পেশায় জড়িতদের।

কামাররা জানান, স্বাভাবিক সময়ে তাদের তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কয়লা, লোহা ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকরণেরও দাম বেড়েছে। বর্তমানে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, চাপাতি ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শহরের পুরাতন বাজার এলাকার কামার শ্রী টিপু মহন্ত বলেন, ‘স্বাভাকি সময়ের চেয়ে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। দু’বছর করোনার কারণে তেমন ব্যবসা হয়নি। এবার আগের লোকসান কাটিয়ে লাভের আশায় বেশি পরিশ্রম করছেন। নতুন অস্ত্রপাতি তৈরির পাশাপাশি পুরাতন দা ও ছুরি শাণ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।’

খোলাহাটি গ্রামের রাসেল মিয়া বলেন, ‘একটি ছুরি ৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, আগের বছর যা ৫০০ টাকা ছিল।’ দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা জানান, কয়লা ও লোহার দাম বেশি হওয়ায় উপকরণের দামও বেড়েছে।

পুরাতন বাজার এলাকার আরেক কামার শ্রী নির্মল কর্মকার বলেন, ‘করোনা না থাকায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে আমাদের কাজের চাপ বেড়েছে। গত দু’বছর লোকসানে কাটিয়েছি। এবার কাজের চাপ বেশি। সকাল ৭টায় এসে বাড়ি যেতে রাত ১২টা-১টা বেজে যায়।’

তবে এর বিপরীত চিত্র গ্রামের কামার কারখানাগুলোতে। কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর ব্যবসা নেই এ পেশায়। পূর্ব পুরুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই এখনো এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কামার পাড়া ইউনিয়নের রাখাল চন্দ্র মোহন্ত। তিনি বলেন, ‘কাজ না থাকায় অনেকে আবার ঢাকা-চিটাগাংসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। সরকার থেকেও কোন সহযোগিতা পাইনি।’

ঈদ সামনে, তবুও কাজ নাই। কিন্তু সারাবছর স্বল্প আয়ে আমরা কীভাবে পরিবার নিয়ে চলি, তা জানার কেউ নেই। কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের বেড়াডাংগা বাজারের কামার শ্রী কালা চান। তবে ঈদের আগ মুহুর্তে বেচা-বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

১ দিন পরই দেশ জুড়ে পালিত হবে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং আওয়াজে আবারো সুদিন ফিরবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন গাইবান্ধার কামাররা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ