ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

টুং-টাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়া

প্রকাশনার সময়: ০৭ জুলাই ২০২২, ১৩:৩১

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এ ঈদকে সামনে রেখে পশু কোরবানির সরঞ্জাম জোগান দিতে কামার শিল্পীদের দোকানগুলো হাপর টানা আর লোহার উপর টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন কামারপাড়া। ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের। দম ফেলারও সময় নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে চলছেন তারা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরাঙা লোহার দণ্ড। কেউ পোড়া দা ও ছুরিতে দিচ্ছেন শান। কেউবা হাপর টেনে বাতাস দিচ্ছেন।

উপজেলার চান্দুরা, রামপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর হরষপুর, আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজার ও দোকান ঘুরে দেখা যায়, দা, ছুরি, কুড়াল, চাকু ও বটির বেচাকেনা বেড়েছে। তবে কারিগরদের অভিযোগ, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি খুবই কম।

জানা গেছে, এ বছর প্রতি পিচ চাকু ১০০-১৫০ টাকা, দা ৩০০-৬০০ টাকা, চাপাতি, জবাই ছুরি ৮০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া পুরানোসব যন্ত্রপাতি শান দিতে গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। সারা বছর তেমন কাজ না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পৈতৃক এই পেশা পরিবর্তন করছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কামার কানাই কর্মকার বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। বাপ-দাদার আমল থেকে এই কাজ করে আসছি। বাবার পেশাকে আগলে রেখে এ কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। সাধারণত ধান কাটার মৌসুম ও কোরবানির সময় কাজের চাপ বেশি থাকে এবং তৈরিকৃত সরঞ্জাম বেশি বিক্রি হয়। তবে এই বছর কাজের চাহিদা আগের বছর অনুযায়ী অনেকখানি কম।

উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের রামপুর বাজারের কামার শিল্পী নিত্য কর্মকার বলেন, সরঞ্জাম তৈরির উপকরণ কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এর মধ্যে লোহার দামও বেড়ে যাওয়ায় ছুরি, চাপাটি, দা, বটির দাম বেশি পড়ছে। সঠিক মজুরিও পাচ্ছিনা। সংসার চালাতেও খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর বাজারে যে পরিমাণ নিত্যপণ্য দাম বাড়ছে তাতে আমাদের মতো গরীব লোকদের সংসার নিয়ে অসহায় মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে।

মানিক কর্মকার বলেন, আমাদের এলাকায় বন্যা হয়ে যাওয়ায় তেমন একটা ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হচ্ছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। সিংগারবিল বাজারে ব্যবসায়ী দুলাল কর্মকার বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। তাছাড়া বাপ-দাদার আমল থেকে এই কাজ করে আসছি। বাবার পেশাকে আগলে রেখে একাজ করে যাচ্ছি।

শৈলন কর্মকার জানান, কোরবানি ঈদে তারা প্রতি বছর দা, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে বিক্রি করেন। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। তাদের আশা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

আলম , সুমন, ইশতিয়াকসহ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, কোরবানি ঈদের আর মাত্র ৩ দিন বাকি। তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছি। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বঁটির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ