খুলনাঞ্চলের ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে। এসব আমদানিকারককে প্রথম দফায় ১১ আগস্ট ও দ্বিতীয় দফায় ১৭ আগস্টের মধ্যে আমদানির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারিভাবে চাল আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সাতক্ষীরার ভোমরার রিয়াদ এন্টারপ্রাইজ, বিকাশ চন্দ্র সাহা, কলারোয়ার পলাশ এন্টারপ্রাইজ, মুকুল এন্টারপ্রাইজ, কাটিয়ার তাহারা ট্রেডার্স, মা-মনি ট্রেডার্স, তুরাজ এন্টারপ্রাইজ, মা ট্রেডার্স, হাসান ইমপেক্স লিমিটেড, নিশাত ইন্টারন্যাশনাল, ফাইয়াজ ইন্টারন্যাশনাল, কালিগঞ্জের পদ্ম এন্টারপ্রাইজ, সামির এন্টারপ্রাইজ, সেফ এন্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল, সুলতানপুরের মন্দিরা ট্রেডার্স, তালার টাটা ক্রপকেয়ার কোম্পানি, মজুমদার এন্টারপ্রাইজ, খুলনার ফারাজিপাড়ার ইসলাম ট্রেডার্স, লবণচরার কাজী সোবাহান ট্রেডিং কর্পোরেশন, টুটপাড়ার কাজী এন্টারপ্রাইজ, জব্বার স্মরণির রাজলক্ষ্মি এন্টারপ্রাইজ, মজিদ স্মরণির এসএম কর্পোরেশন, ফুলতলার রত্না এন্টারপ্রাইজ, নিপা এন্টারপ্রাইজ ও লাবনী এন্টারপ্রাইজ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান আমদানির ক্ষেত্রে নির্দেশনাপত্রে প্রথম দফায় ২১ জুলাই ও দ্বিতীয় দফায় ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এলসি খোলার এবং আমদানিকৃত বস্তায় চাল বিক্রির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রথম দফায় ১১ আগস্টের মধ্যে এবং দ্বিতীয় দফায় ১৭ আগস্টের মধ্যে সকল চাল বাজারজাতকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা খাদ্য বিভাগের মে মাসের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো মিলে বিধি বহির্ভূত ধান-চালের মজুদ নেই। খুলনাস্থ দু’টি কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম ও উপজেলা পর্যায়ের আট গুদামে ১ লাখ ২২ হাজার ৬৭১ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। তার মধ্যে আমদানিকৃত চালের পরিমাণ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন।
অপরদিকে কৃষি বিপণনের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় মোটা চাল ৪৩-৪৪, মাঝারি ৫৩-৫৪ ও চিকন চাল ৬২-৬৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে চিকন চাল ৭০ টাকা কেজি দরেও বিকিকিনি হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় খুলনা ও সাতক্ষীরার ২২ আমদানিকারককে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
খুলনার আমদানিকারক কাজী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাজী নিজাম উদ্দিন উল্লেখ করেন, গত বছরের অক্টোবরে ভারত থেকে চাল খুলনা পর্যন্ত আসতে ২৮ দিন সময় লেগেছে। পরিবহন খরচসহ তখন প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে ৫৩ টাকা। আমদানিকারকরা কেজিপ্রতি ১টাকা লাভ করে। কিন্তু ঢাকার বাজারে ৫৯ টাকা এবং খুলনায় ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। অপর এক সূত্র বলেছেন, ডলারের মূল্য অস্থিতিশীল থাকায় আমদানিকারকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক কৃষি বিভাগ ইউএসবিএ প্রকাশিত ‘গ্রেইন এন্ড ফিড আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’ বছরে চালের দাম ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষঞ্জরা বলেছেন, চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠবে।
প্রসঙ্গত, মার্চ মাস থেকে বাজারে চালের মূল্য বাড়তে থাকে। মে মাসে বোরো উঠার পরও চালের মূল্য স্থিতিশীল হয়নি। ১০ টাকা কেজির চাল ১৫ টাকায় নির্ধারণ করে জাতীয় বাজেটে পেশ করার পর থেকে বাজারে চালের মূল্য বাড়তে থাকে। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বোরো কিনে মজুদ করেছে। এতে আরও কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হয়।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ