খুলনার ডুমুরিয়ায় অবস্থিত অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ভিলেজ সুপার মার্কেট ক্রেতা-বিক্রেতা টানতে পারছে না। ১০ কোটি টাকায় নির্মিত মার্কেটটি উদ্বোধনের পর দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও কাজে আসেনি। চলছে নিভু নিভু অবস্থায়।

এদিকে, অচলাবস্থার পিছনে ৩টি কারণকে দায়ী করেছেন পরিচালনা কমিটি। কারণগুলো হচ্ছে-কৃষকদের দাঁদন না দেওয়া, মিটারে স্বচ্ছ পরিমাপে ক্রেতাদের অনাগ্রহ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার আন্তরিকতার অভাব।

ভিলেজ সুপার মার্কেট মালিক সমিতির সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শেখ বাড়ির সামনে ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’ নামে আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইন্টারন্যাশনাল এনজিও ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২ একর ১০ শতক জমির ওপর নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় ডিপো, ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার চিলার আইচ ফ্যাক্টরি, মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল ম্যাকানিক্যাল রুম, হর্টি ক্যালচার প্রসেসিং জোন, হর্টি প্যাকেজিং জোন, অ্যাকোয়া প্রসেসিং জোন, অ্যাকোয়া প্যাকেজিং জোন, অ্যাকোয়া আড়ৎ, হর্টি আড়ৎ, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ফার্মার ট্রেনিং সেন্টার, অফিস সিকিউরিটি রুম, টয়লেট জোন ও বাউন্ডারি ওয়াল ইত্যাদি। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৮ সালে মার্কেটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও মার্কেটটি জমেনি।

সম্প্রতি সরেজমিন সকাল ১০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেখা যায়, ২০টি মাছ বিক্রির ঘরের মধ্যে মাত্র একটি ঘরে অল্প কিছু মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। বাকি ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।

এলাকার কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, মনিরুল ইসলাম জানান, মার্কেটটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিলো এলাকার তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষি পণ্য (ফল-মূল, শাক-সবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি) ক্রয় করে দেশের বিভাগী শহরগুলোর আগোড়া সুপার শপে বিক্রি করা। সেই সঙ্গে বিদেশেও রফতানি করা। এছাড়া কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে গড়ে তোলা। কিন্তু কোনো উদ্দেশ্যই সফল হচ্ছে না। কারণ মার্কেটে কোনো ক্রেতাই নেই। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাও আসছে না। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন মার্কেট কোনো কাজে আসছে না।

মাছ (ব্যাপারী) ক্রেতা তৈয়বুর রহমান বলেন, মার্কেটটি প্রধানত দুটি কারণে জমছে না। এখানে মিটারে শাকসবজি, ফল ও মাছ ওজন করা হচ্ছে। ফলে আড়ৎদারদের কাছ থেকে ক্রেতারা বা ব্যবসায়ীরা ওজনে বেশি পণ্য নিতে পারছে না। কিন্তু অন্য মার্কেটে দাড়িতে ওজন করায় আড়ৎদাররা তাদের ওজনে বেশি পণ্য দিয়ে দেয়। এতে উৎপাদনকারীরা ঠকে যায় আর ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। এখানে সেই সুযোগ নেই।

মার্কেটটির মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, মার্কেট কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো এ মার্কেট থেকে কিনে বিদেশে বা বড় শহরগুলোর আগোড়া সুপার শপে বিক্রি করবে। সেই কারণে মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ঘর নিয়েছিল ব্যবসায়ীরা, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও তারা রক্ষা করেনি। তাছাড়া লাভের ৩ ভাগের ১ ভাগ বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে দিতে হয়। বছরের ৪-৫ মাস বেচাকেনা ভালো হয় , তবে বাকি সময়ে নিজেদের পকেট থেকে ঘরভাড়া দিতে হয়। দাদন দিয়েও আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু টাকা মেরে দিয়ে আর আসে না। তাছাড়া এই এলাকার সবজি খুব ভালো। এই সবজি খুলনা বিভাগসহ ঢাকায় চালান যায়। সেটাও তারা বিদেশে রপ্তানি করতে পারছে না। এসব কারণে মার্কেট দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার ফাইন্যান্স ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, সিজনে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। দুধ বিক্রির সেন্টারটি ব্র্যাককে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ২ হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয়। ইউরোপের দেশগুলো যে নিখুঁত সবজি চায় এখানে তা উৎপাদন হয় না। ফলে সবজি বিক্রি এখন বন্ধ আছে। তবে, মার্কেট চালু হওয়ার পর গত বছর বিদেশে সবজির একটি চালান গিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসএম