কক্সবাজারে সরকারের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে রয়েছে রেললাইন, বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক করণ, মাতারবাড়ী প্রকল্প ও এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি। এসব প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমও চলমান। বিশেষ করে রেললাইন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় কাজ শেষ হয়েছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ জোরেশোরে চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্প ঘিরে কক্সবাজারে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র গড়ে উঠেছে শুরু থেকে। তারা দুর্নীতি আর অনিয়মের হাট বসিয়ে হয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।
ভূমি অধিগ্রহণের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র। ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের টাকা হাতে পাইনি কোন ভূমির মালিকরা। ভূমি অধিগ্রহণ অফিস ঘিরে সেখানে সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সার্ভেয়াররা ছিলেন মাষ্টার মাইন্ড। ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘুষের ৯৩ লাখ টাকাসহ র্যাবের একটি অভিযানে সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানকে কক্সবাজারের বাহারছড়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই ভূমি অধিগ্রহণ ঘিরে কক্সবাজারে একটি বড় ধরনের সিন্ডিকেটের তথ্য সামনে আসে। এছাড়া বিভিন্ন সময় একাধিক সার্ভেয়ার ও দালাল গ্রেফতার হয়।
সর্বশেষ গেল শুক্রবার ঢাকায় সাড়ে ২৩ লাখের বেশি টাকাসহ ধরা পড়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণের (এলএ) সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ এর লিখিত অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করে এই সার্ভেয়ারকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে বলে জানান কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস।
শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে থানায় সোপর্দ করেছে তা আইন মতে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। যা দুনীতি দমন কমিশনারের কক্সবাজারস্থ সম্মিলিত কার্যালয়ে পাঠানো হবে। দুদক বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
ওসি জানান, সার্ভেয়ার আতিকুর এর কাছ খেকে ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা পাওয়া গেছে। ঢাকা ধরা পড়ার পর কিভাবে সার্ভেয়ারকে কক্সবাজার আনা হয়েছে তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। তার ব্যাগ স্ক্যান করলে বিপুল পরিমাণ টাকার স্তূপ দেখা যায়। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে। কিন্তু এর মধ্যে সকাল পৌনে ১০টার ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছালে তল্লাশিতে তার ব্যাগ ভর্তি টাকা পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরেন। পরে আতিকুরের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে অপর একটি ফ্লাইটে তাকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে আতিকুরকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি জানান, তার কাছে যে টাকা পাওয়া গেছে এই টাকার বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। বিষয়টি তদন্ত করতে সার্ভেয়ারকে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ওখানে পুলিশ এবং দুদক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। এই সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তিনি মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িতে রয়েছেন।
এব্যাপারে কথা বলতে রাজী হননি দুদক কক্সবাজারস্থ সম্মিলিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মুনিরুল ইসলাম।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ